উওম জীবন সঙ্গী 5,6,7
সম্পূর্ণ গল্প পড়তে চান?
Click here to read the full story.উওম_জীবন_সঙ্গী
লেখনিতে-বর্ণ
৫.
দুপুর গড়িয়ে প্রায় বিকেল হলো ওদের বাসায় পৌঁছাতে।
অনেকটা সময়ই জ্যামে কাটাতে হয়েছে তাই সময়টা বেশিই লেগে গেছে।বাসার কলিংবেল চাপতেই ওপর পাশ থেকে শাহরিয়র দরজা খুলে দিলো।শাহরিয়র ওদের সালাম দিয়ে ব্যাগ পএ হাতে হাতে রুমে নিয়ে রাখলো।
অলীদ আগেই শাহরিয়র কে বলে রেখেছিলো তাই ও দুপুরের খাবারটা রেস্টুরেন্ট থেকে এনে রেখেছে।
—ভাবীকে নিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে আমি পাশের রুমে আছি
—হুম যা
দুজনে ফ্রেশ হয়ে এসে শাহরিয়রকে ডেকে একসাথে খেতে বসল।
বিরিয়ানি এনে রেখেছিলো এটা আবার রাইসার অনেক পছন্দের খাবার অবশ্য অলীদই শাহরিয়রকে বলে রেখেছিলো।রাইসা বিরিয়ানির কথা শুনে খুশি হলো তবে এখানেও অবাক হলো আর ভাবতে লাগলো নিশ্চই এটা এই মানুষটাই কাজ।শাহরিয়র খাবার বেড়ে দিতে চাইলেও রাইসা দিতে দেয় নি
—দিন ভাইয়া আমিই আপনাদের বেড়ে দিচ্ছি
—ঠিক আছে দিন
শাহরিয়র আর কিছু বললো না তবে অলীদ মনে মনে বেশ খুশি হলো।যাক প্রথম দিন এসেই বউ কাজে হাত দিয়েছে মনে হয় রাগ পরতেছে,রাইসার দিকে এক ধ্যানে চেয়ে এ সব ভাবছে ।পাশ থেকে শাহরিয়র ওকে হাল্কা করে ধাক্কা দিলো আর ফিস ফিস করে বলছে—
—আরে কি ভাবছিস খেয়ে নে
—হুম হুম খাচ্ছি
—সবে তো আসলি দেখার অনেক সময় পাবি,বলেই হাসতে লাগলো।
অলীদ কিছু বললো না খাওয়ার মনোযোগ দিলো।
খাবার খেয়ে শাহরিয়র বিদেয় নিয়ে চলে গেলো।অলীদ ফোনে কথা বলতে বলতে ওর রুমে এসে দেখে রাইসা বেডে বসে আছে ,ফোনটা রাইসারকে দিয়ে কথা বলতে বললো।রাইসার বাবা কল করেছে,বাবা মার সাথে কথা শেষ করে ফোনটা অলীদ কে এগিয়ে দিলো।অলীদ নিজের কিছু জিনিস পএ নিয়ে রাইসাকে উদ্দেশ্য করে বললো-
—আজ থেকে তুমি এ রুমে থাকবে আর আমি পাশের রুমে আছি ,কিছুর দরকার হলে ডাক দিও আর এখন রেস্ট নাও বলে চলে গেলো।রাইসা কিছু বলার সুযোগ পেলো না।এই প্রথম সবাইকে ছেরে আসলো তাই মনে পরতেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো,কি করবে ভেবে পাচ্ছে না তখন উঠে বারান্দায় গেলো ।বাসাটা মোটামুটি ভালোই আর বারান্দাটাও সুন্দর।কয়েকটা গোলাপের গাছ লাগানো আছে টবে।গাছ গুলো দেখে মনটা মুহূর্তেই ভালো লাগতে শুরু করলো।কতোক্ষণ থেকে বাসার ভেতরে ডুকে সবটা দেখতে লাগলো।এখন তো এটাও ওরই বাসা সবটা ওরই সামলে রাখতে হবে।ড্রয়িং ডাইনিং কিচেন রুম দেখতে লাগলো।সবটা মিলিয়ে ভালোই লাগলো।নিজের রুমে যাওয়ার আগে পাশের রুমে উকি দিয়ে দেখলো অলীদ ঘুমিয়ে আছে,মনে মনে ভাবছে মানুষটার জার্নিতে কষ্ট হয়ে গেছে কিন্তু এখানে কেনো ঐ রুমে ঘুমাতো? আবার ভাবছে আমিই তো তাকে কিছু বললাম না।ভাবনা বাদ দিয়ে রুমে গিয়ে নিজের কাপড় গুলো বের করে ড্রয়ারে রাখলো সাথে অলীদেরটাও গুছিয়ে রাখলো।মানুষটার ওপর গতোকালও রাগ ছিলো কেনো জানি এখন আর তেমন নেই।তাকে দেখলেই সব রাগ পানি হয়ে যায় ।নিজের পছন্দের মানুষটাকে পেয়েছে তো আর কি লাগে ভেবে মুচকি হাসলো।কিন্তু এখনই সেটা প্রকাশ করা যাবে না।দেখি সে কি করে ?সেও কি আমায় ভালোবাসে নাকি বাসে না ?নিজ ইচ্ছায় কাছে টেনে নেয় কিনা সেই অপেক্ষা।
রাত প্রায় সারে দশটার মতো বাজে ,অলীদের ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো রাইসার
—আর কতো ঘুমাবে
—মানে
—গাড়িতে ঘুমালে আবার সেই যে ঘুমালে এখন রাত সারে দশটা বাজে এবার তো উঠে পরো।
—কি রাত সারে দশটা বাজে?
—জ্বি হা,ভেবেছিলাম বউ কে সাথে আনছি একটু আরাম করে ঘুমাবো ,খাবো তা আর পারলাম না।চলো খেয়ে আবার ঘুমাবে
।
—হুম চলেন কিন্তু কি খাবো ?
—খিচুরী খাবে।
—খিচুরী?কিন্তু আপনি এটা অর্ডার করতে গেলেন কেনো?
—অর্ডার করিনি নিজে রান্না করছি ,আর কিছু পারিনা তাই সব কিছু মিক্স করে এটাই ভালো রান্না করতে পারি।
—কিন্তু আপনি আমাকে তো ডাকতে পারতেন বলেই রাইসা মন খারাপ করে ফেললো।
—হইছে আর মন খারাপ করতে হবে না,আসো
—হুম চলেন
দুজন খেতে লাগলো,খারাপ লাগছে না খেতে ভালোই লাগছে রান্নাটা সত্যি ভালো হইছে ।
—আপনি তো ভালোই রান্না পারেন
—হুম তাই বলে ভেবো না রোজ রান্না করে খাওয়াবো।বউয়ের হাতের টাও খাবো অবশ্য সে যদি খাওয়ায়
বলে মুখ টিপে হেসে খেতে লাগলো।
রাইসা বেশ বুঝতে পারছে অলীদ ওকে খোঁচা মেরে কথা গুলো বলছে।
—আমি কিন্তু রান্না পারি
—ওহ তাই বুঝি আগে পরে খাইনি তো কখনও তাই ভাবলাম রাধতে জানো না মনে হয়।
—ঠিক আছে আমিও দেখিয়ে দিবো বলো খেতে লাগলে।
খাওয়া শেষ করে রাইসা সবটা গুছিয়ে রুমে আসলো।অলীদ টেবিলে বসে কাগজ পএ গোছাচ্ছে রাইসা এসে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে চুল আচরাচ্ছে আর এক ধ্যানে আয়নায় অলীদ কে দেখছে।
—বাসা পছন্দ হয়েছে?
—হুম হয়েছে
—সব ঠিক ঠাক আছে তো?
—হা আছে বারান্দাটা বেশি সুন্দর
—সেটা ঠিক আছে কিন্তু ওখানে ঘুমাতে পারবো না বলে দিলাম।
কথাটা শুনেই রাইসার বিয়ের প্রথম রাতের কথা মনে পরলো বেচারা সারারাত নিজের রুম ছেরে বারান্দায় রাত কাটিয়েছিলো।
—কাল থেকে নিয়ম করে পড়ালেখাটা চালিয়ে যাবে পরিক্ষার বেশি সময় নেই ।রেজাল্ট ভালো না হলে কিন্তু খবর আছে।
কথা গুলো শুনেই রাইসার টেনশন বেড়ে গেলো আর মনে মনে বলতে লাগলো
“ইশ রে এটার কথা তো ভুলেই গেছিলাম কিন্তু সামনে এমন একটা মানুষ থাকতে লেখা পড়ায় কি মন বসবে?
কিন্তু কোনো উপায় নেই তা ছাড়া নিজেরও বড়ো স্বপ্ন ভালো রেজাল্ট করবো “
—হুম ঠিক আছে ।
অলীদ ওর হাতের কাজ শেষ করে উঠে বললো
—এখন ঘুমাও তাহলে
—আপনি ঘুমাবেন না?
—হুম পাশের রুমে
—আপনি যাবেন নাহ এখানেই ঘুমাবেন
কথা শুনে অলীদের মনে খুশি খুশি লাগলো।
—কি ব্যাপার আজ একসাথে থাকতে চাইছো যে ?ঐ দিন তো সতর্ক করে দিলে,তুমি কি জানো একসাথে থাকলে তোমাকে ছুতে পারি তোমার কাছে আসতে পারি সেটা কি তুমি হতে দিবে?
রাইসা কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না ,
—শুনুন এ সব কথা রাখুন আমার ভয় লাগছে আর নতুন জায়গা তাই বলছি এখানেই থাকুন ।
অলীদ কথা না বাড়িয়ে শুয়ে পরলো।লাইট অফ করে ড্রীম লাইট অন করে রাইসার থেকে দূরত্ব রেখে শুয়ে পরলো।অলীদের ঘুম আসছে না কাংক্ষিতো ভালোবাসার মানুষটা পাশে কিন্তু তাকে ছুতে পারছে না আদর করতে পারছে না।ও জানে রাইসা ওকে ভালোবাসে,ওর ডাকে সারা না দিয়ে থাকতে পারবে না যতই রেগে থাকুক না কেনো অলীদ এখনই কাছে যাবে না ওর।ওদের মধ্যে এখন কিছু হলে রাইসার মনে শুধু এই ভাবনাই থাকবে আর এটা হলে ওর পড়ালেখার ক্ষতি হবে সেটা ও চায় না তাই সময়ের অপেক্ষা।
রাত গভীর রাইসা ঘুমে বিভোর অলীদ উঠে রাইসা কে দেখতে লাগলো সে দিনের ছোট্ট মেয়েটা আজ ওর বিয়ে করা বউ ।কতোক্ষণ দেখে কপালে আলতো করে একটা চুমু একে দিলো।এটাই ওর প্রথম ভালোবাসার পরশ কিন্তু তাও লুকিয়ে দিতে হলো,দীর্ঘশ্বাস ফেলে আর কিছু না ভেবে অলীদ পাশের রুমে গিয়ে শুয়ে পরলো।
সকালের ঘুম ভেঙ্গে রাইসা ঘড়ির দিকে চেয়ে দেখলো সকাল আটটার বেশি বেজে গেছে।নিজের কাছে খারাপ লাগলো ।এতো বেলা পর্যন্ত ঘুমিয়েছে আর সে আমায় ডাক দিলে না?ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হয়ে ড্রয়িং রুমে এসে দেখে অলীদ পেপার পরছে।
—আপনি আমায় ডাক দিলেন না কেনো ?
—দিয়েছিলাম ওঠোনি ভাবলাম কালকের জার্নির ধকল যায়নি তাই আর ডাকিনি।
তখনই রান্না ঘর থেকে আওয়াজ আসলো এটা শুনে ওরাইসা জিজ্ঞেস করলো
—রান্না ঘরে কে?
অলীদ কিছু না বলে খালা খালা বলে ডাকতে লাগলো।
—অলীদ বাবা ডাকছিলা?
—হা খালা এই যে আপনাদের বউমা
—রাইসা ইনি হলেন জমিলা খালা আমি বাসা নেওয়ার পর থেকেই খালাকে রেখেছি ,খালা সব কাজ করে দিয়ে যায়।
রাইসা সালাম দিয়ে কথা বললো ঝমিলাও খুব খুশি হলো সত্যি অনেক সুন্দর বউ পেয়েছে অলীদ বাবা।
রান্না ঘরে জমিলার সাথে রাইসা কথা বলতেছে।অল্প সময়েই জমিলার সাথে বেশ মিশে গেছে রাইসা।অবশ্য ঝমিলাই বেশি কথা বলে।
—জানেন আম্মা আপনি আসার আগে অলীদ বাবাজীর কাছ থেকে কতো যে আপনার গল্প শুনছি তার হিসেব নেই ।
কথা গুলো শুনে রাইসা অবাক ।
—কি কি শুনছেন খালা?
তখনই অলীদ এসে বললো
—খালা রান্না কি হইছে আমার সময় নাই তারাতারি খাবার দিন।
জমিলা খাবার এনে রাখছে আর রাইসা খাবার বেড়ে দিচ্ছে।
—তুমিও বসো এক সাথে খাই
—আপনি খেয়ে নিন আমি পরে খাবো।
—আচ্ছা খেয়ে দেয়ে পড়তে বসবে কিন্তু।আর কিছু লাগলে আমাকে ফোন দিও।
—আপনার কি অনেক দেরি হবে আসতে?
—কেনো বলোতো ?
—আমি একা একা থাকবো কেমনে
—খালাকে বলে রেখেছি সে দুপুরের পর পর্যন্ত থাকবে তারপরে বিকেলে তো আমি চলে আসবো।
—আচ্ছা।
অলীদ চলে গেলে রাইসা জমিলাকে নিয়ে খেয়ে নিলো।আবার দুজন গল্প করতে বসে গেলো।ঝমিলা তার জীবনের গল্প বলতেছে আর রাইসা মনোযোগ দিয়ে তা শুনতেছে।
ক্রমশ….
উওম_জীবন_সঙ্গী
লেখনিতে-বর্ণ
৬.
প্রায় ভর দুপুর’ সামসুল হক জরুরী একটা মিটিং শেষ করে বাড়ি ফিরছিলেন।মাঝপথে কারো ডাক শুনে থেমে গেলেন-
—আসসালামু আলাইকুম চাচা
—ওয়া আলাই কুমুস সালাম, চিনলাম না তো?
—ওহ চিনবেন কি করে? পরিচয় দিলেই চিনবেন
—তো কে তুমি?
—আমি চেয়ারম্যান এর একমাএ ছেলে
কথাটা শুনে হক সাহেব মনে মনে চমকে গেলেন।কিন্তু প্রকাশ করলো না।ওর সাথে আরো কয়েকজন ছেলেপেলে ও আছে”
—ও আচ্ছা ,তো এবার বলো আমাকে থামালে কেনো?
—নাহ এমনি আপনার সাথে তো পরিচয় নেই সেই জন্য ভাবলাম পরিচয় দিয়ে কথা বলে নেই ।
—মনে হয় তোমরা আমার পরিচয় ভালো করেই জানো আর তোমরটাও পেলাম আর কিছু বলবে ?
—নাহ তেমন কিছু না”তবে বলতে চাইছিলাম কি চাচা আপনার তো একটা মেয়ে আছে তা তাকে এভাবে হুট করে বিয়ে দিলেন কেনো ?
কামডা কি ভালো করছেন?
—দেখো আমার মেয়ে আমি কি করবো কি করবো না সেটা আমি সিদ্ধান্ত নিবো ।আর এ বিষয়ে অন্য কেউ কথা বলুক আমি চাই না।আর হা ভালো মন্দ এটার প্রশ্নের জবাব আমি কাউকে দিতে বাধ্য নই।
তুমি চেয়ারম্যান এর ছেলে শুনছি শহরে লেখাপড়া করো তা হলে এখানে এসে কেনো এ সব করে বেড়াও ?”
—না মানে চাচা এসব তো খোঁজ নেওয়ার দায়িত্ব আমাদের নাকি?
বলেই দাড়ি চুলকাতে চুলকাতে বাঁকা হাসতে লাগলো।এ সব দেখে হক সাহেবের ভিষণ রাগ লাগলো কিন্তু সে ধৈয্য ধরে থাকলেন।সে জানে ছেলেটা সুবিধার নয়,কথা বললেই কথা বাড়াবো তাই কিছু বললো না।
—তোমরা পাশে যাও আমি যাবো।
—এই তোরা রাস্তা ছার রাস্তা ছার চাচাকে যেতে দে,
চাচা আপনি নিঃচিন্তে বাড়ি যান।
হক সাহেব কোনো কথা না বলে চলে আসলো।
ঐ দিকে ছেলেটা বিশ্রী হাসি দিয়ে বলতে লাগলো
—এতো দেমাগ মেয়ে নিয়ে,এই দেমাগ যদি আমি না ভাঙতে পারি তো আমিও চেয়ারম্যান এর ছেলে না।হা হা হা,,
~~~
হক সাহেব বাড়িতে গিয়েই স্ত্রীকে সবটা খুলে বললেন।সবটা শুনে তারও অজানা ভয়ে বুক কেপে উঠলো।
—রাইসার আব্বু এই ছেলে যদি আমার মেয়ের কোনো ক্ষতি করে দেয়?
—আরে চিন্তা করো না সে জন্যইতো ওর সব দায়িত্ব অলীদ নিয়েছে।
—তবুও আমার কেমন ভয় ভয় লাগছে আপনি অলীদ কে বলেন মেয়েটাকে যেনো এক বারে পরিক্ষার সময়ই নিয়ে আসে।
—হুম আমিও তাই ভাবছি।সেটাই ভালো হবে।
————
পরন্ত বিকেল এর আবহাওয়াটা বেশ লাগছে রাইসার কাছে বই হাতে নিয়ে বারান্দায় বসে আছে আর মাঝে মাঝে রাস্তায় চোখ বুলাচ্ছে।মেইন গেট দিয়ে কেউ ডুকলে সরাসরি দেখা যায়।
কিছুক্ষণ আগে ঝমিলা বাসায় চলে গেছে।তার সাথে রাইসার ভালোই সময় কেটেছে।অনেক গল্প করতে পারে।নিজের জীবনের অনেক গল্পই শুনিয়েছে রাইসাকে ।ঝমিলাও খুশি রাইসার মতো কারো সাথে মন খুলে কথা বলতে পেরে।যে সব বাসায় কাজ করে সবার বাসার লোক এতো ভালো হয় না ,কেউ কেউ তো শুধু কাজ করাবে কিন্তু কথা বলা তো দুরের কথা শোনারই সময় তাদের হয় না।
তবে আজ রাইসা জমিলার কাছ থেকে অলীদের ব্যাপারে অনেক কিছু জানতে পারছে।অলীদ রাইসাকে পছন্দ করে ওদের বিয়ে হবে আর এখানে নিয়ে আসবে সে কথাও জমিলাকে বলছে।রাইসার যাতে লেখাপড়ার ও ক্ষতি না হয় সে জন্য ও জমিলাকে আগে থেকেই বলে রাখছে যেনো সব কাজ সে করে দিয়ে যায়।এ সব শুনে রাইসার মনে অলীদের জন্য ভালোবাসাটা দ্বিগুন হয়ে গেলো।মনে মনে ভাবছে
—সে আমাকে নিয়ে এতো কিছু ভাবে?
মানুষটা আমায় ভালোবাসে ? কই কখনও তো তেমন ভাব প্রকাশ পায় নি”ঠিক আছে সে যদি প্রকাশ না করে ,নিজে থেকে কাছে টেনে না নেয় তা হলে আমিও করবো না,হুম।বলে নিজে নিজে মুচকি হাসতে লাগলো।ভাবনার মাঝেই কলিং বেলের আওয়াজ পেয়ে দরজা খুলতে গেলো
ক্লান্ত দেহ নিয়ে ভেতরে ডুকলো অলীদ।রাইসা দরজা বন্ধ করে অলীদের পিছু পিছু রুমে ডুকলো।বিছানায় বসে পরে শার্টের বোতাম খুলতে লাগলো আর বলতে লাগলো
—আমাকে এক গ্লাস পানি দাও তো
রাইসা টেবিলে রাখা জগ থেকে ঢেলে এক গ্লাস পানি এনে অলীদকে দিলো।
—এই নিন পানি
দাও বলে খেতে লাগলো।মানুষটাকে বেশ ক্লান্ত লাগছে।পানি খেয়ে গ্লাসটা এগিয়ে দিলো রাইসার নিকট।
—চা বা কফি করে দিবো?
—হুম দিলে তো ভালো হয় তবে এককাপ আদা চা করো আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।
—আচ্ছা ঠিক আছে বলে রান্না ঘরের উদ্দেশ্য বের হলো।অলীদ ও ওয়াশ রুমে ঢুকলো।
শাওয়ার নিয়ে বের হলো যদিও সেটার দরকার ছিলো না কিন্তু রাস্তায় যে হারে ধুলোময়লা শাওয়ার না নিয়ে উপায় নেই।তার ওপর গরমে ঘেমে একাকার অবস্থা।এখন অনেকটা স্বস্তি লাগছে।
শুধু তোয়ালে পরেই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হাতের আঙ্গুল গুলো দিয়ে চুল গুলো এদিক ওদিক করতে লাগলো।তখনই রাইসা চা নিয়ে রুমে ঢুকলো ।অলীদের এমন অবস্থা দেখে রাইসা থ মেরে রইলো আজ প্রথম স্বামীর এমন রূপটা দেখতে পেলো।খালি গায়ে খুবই আকর্ষনীয় লাগছে।অবাধ্য কিছু চাওয়া পাওয়া মনে নারা দিলো কিন্তু অলীদ ওর ইপস্থিতি টের পেয়ে দ্রুত শার্ট গায়ে জড়িয়ে নিলো।
—এই নিন আপনার চা বলেই বারান্দায় চলে গেলো।
অলীদ বুঝতে পারছে রাইসা লজ্জা পেয়েছে।চা টা টেবিলে রেখে ট্রাউজার পরে নিলো।চায়ের কাপ হাতে নিয়ে রাইসার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো ,কয়েক চুমুক খেয়ে বলতে লাগলো
—বেশ ভালো চা বানাতে পারো তো?
—তাই বুঝি ?
—হুম দারুন লাগছে একটু খেয়ে দেখো তো
—না না আপনি খান আমার এখন ইচ্ছে করছে নাহ
—স্বামীর কথা ফেলতে নেই বলছি অন্তত এক চুমুক খেয়ে দেখো
বলে কাপটা এগিয়ে দিলো রাইসাকে
এক চুমুক খেতেই ওয়াক থু বলে চা ফেলে দিলো
—এটা কি হলো?
—উপস আপনি এটা কেমনে খাইছেন বলেন ..আল্লাহ আমি তো চিনির বদলে লবন দিয়েছি ।
—সমস্যা নেই প্রথম প্রথম এমন হবে ,পরে রান্না ঘরের কোনটা কি সব কিছু মুখস্ত হয়ে যাবে।মন খারাপ করো না।
—কিন্তু আমার জন্য তো আপনার মুখটাও লবনাক্ত হয়ে গেলো যে
বলেই মন খারাপ হয়ে গেলো।
—আপনি বসুন আমি আবার বানিয়ে নিয়ে আসছি বলে যেতে লাগলে অলীদ ওর হাত ধরে বসলো,
—বসো এখানে আর যেতে হবে না।আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে,এবার বলো মন ভালো তো?মানে এখানে কেমন লাগছে?
—ভালো কিন্তু সবার জন্য মন খারাপ লাগে,আগে তো এভাবে থাকিনি তাই ।
—হুম সবটাই বুঝি কিন্তু আমি ও তো একা থাকি নাকি!আমার দিকটা দেখবে না?
কথাটা শুনে রাইসা লজ্জা পেলো কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না,
—আর তা ছাড়া পরিক্ষার আগেই তো আবার যাচ্ছো তাই মন খারাপ করোনা।
—হুম ঠিক আছে,আচ্ছা আপনার লেখাপড়া আর জব একসাথে করতে অনেক কষ্ট হয় তাই না?
এক সাথে দুটো কেমনে করেন?
—হা হয় কিন্তু জীবনে চলার জন্য তো করতে হবে ,আগে একজন ছিলাম এখন দুজন এর পরে সদস্য বাড়বে তো কষ্ট তো করাই লাগবে নাকি?
কথাটা শুনে রাইসা এবার আরো লজ্জা পেলো ব্যাপার টা অলীদ বুঝতে পেরে কথার প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে ফেললো।
—চলো তোমাকে নিয়ে একটু বের হবো।রেডি হও
—কোথায় যাবো?
—তোমাকে নিয়ে রিকশা করে ঘুরে বেড়াবো,বেশি দূরে না আসেপাশেই মন ভালো লাগবে।
—সত্যি বলছেন ?
—হা সত্যি বলছি
—যাও রেডি হয়ে নেও
—হুম ঠিক আছে
রাইসা বোরখা হিজাব পরে নিলো অলীদ ও রেডি হয়ে নিলো,
দুজন একসাথে বের হয়ে রিক্সা ঠিক করে উঠে পরলো।
—এই মামা আমাদের এই এলাকাতে ঘুরবো চলেন
—চলেন
পাশাপাশি বসা দুজন রিক্সা চলতে লাগলো,একটা অন্যরকম ভালোলাগা ফিল হচ্ছে দুজনের মনে।অলীদের এই সব ইচ্ছা অনেক আগ থেকেই যদিও বিয়ের পর করবে ভেবে রেখেছে কিন্তু রাইসার ইচ্ছা ছিলো বিয়ের আগে রিলেশন করে এসব ঘোরাঘুরি করবে।সেটা হয় নি তবে এখন ওরা পবিএ বন্ধনে আবদ্ধ আর এই সময়টাই যেনো সবচাইতে ভালো লাগছে।রাইসা নিজেও সেটা বুঝতে পারছে সত্যি এই সময়টাই উওম সময় আর জীবনে উওম মানুষটাকে পেয়েছে আর কি লাগে।মনে আর কোনো চাওয়া পাওয়া নেই।এখন শুধু মানুষটাকে পুরোপুরি নিজের করে নিতে পারলেই হয়।
কিন্তু কই সে তো কাছে টেনে নেয় না ,ভালোবাসে না এসব ভেবে আবার মন খারাপ করে ফেললো,ভাবছে না নেক আমিও ধরা দিবো না।
রাইসা হঠাৎ নিরব হয়ে গেলো এই তো কিছুক্ষণ আগেও মুড ভালো ছিলো কি বলো আবার এটা বুঝতে পেরে অলীদ জিজ্ঞেস করলো
—কি ব্যাপার মন খারাপ করছো কেনো ,কোনো সমস্যা বলো?
—নাহ কিছু না এমনি।
—ভালো না লাগলে চলো ফিরে যাই
—না ঠিক আছি তো
—ওকে
প্রায় ঘন্টা খানেক ঘুরে একটা রেস্টুরেন্ট গিয়ে বসলো।
—কি খাবে বলো?
—আপনি যা খাবেন তাই খাবো
—আচ্ছা ঠিক আছে,
অলীদ ওর পছন্দ মতো খাবার অর্ডার করলো।
খাবার খেয়ে দুজনে বের হলো ,পাশেই একটা মার্কেট সেখানে রাইসাকে নিয়ে ডুকলো
—এখানে কেনো কিছু কিনবেন?
—হা কিনবো
—আপনার জন্য?
—নাহ আমার বউয়ের জন্য
—আমার জন্য আবার কি কিনবেন
—চলো গেলেই দেখতে পাবে
একটা বোরখার দোকানে ডুকলো।অলীদের পছন্দ মতো একটা বোরখা আর হিজাব কিনে দিলো রাইসাকে।অলীদ ভাবলো সবসময় যেহেতু বাইরে এটা বেশি পরা হয় তাই এটাই দেই পরে না হয় অন্যকিছু কিনে দিবো।
জিনিস দুটো রাইসার ও খুব পছন্দ হলো ,মানুষটার পছন্দ সুন্দর।মনে মনে অনেক খুশি হলো।আর অলীদ এই খুশিটা ফিল করতে পারছে আর মনে মনে বলছে
—তোমাকে খুশি রাখতে আমার সাধ্য মতো চেষ্টা করবো কেনোনা তুমি তো আমার জীবনের একটা অংশ আমার পথ চলার জীবন সঙ্গী।সারা জীবন তোমাকে আগলে রেখে হাসি খুশি রাখতে চাই প্রিয়তমা ।
ক্রমশ…..
উওম_জীবন_সঙ্গী
লেখনিতে-বর্ণ
৭.
দেখতে দেখতে আরো কয়েকটা দিন কেটে গেলো।অলীদ ওর লেখাপড়া আর জব নিয়ে অনেকটা ব্যস্ত আছে।সামনে ওর ভার্সিটির ফাইনাল পরিক্ষা।শত ব্যস্ততার মাঝে রাইসাকে ঠিক সময় দিয়ে থাকে।রাইসা লেখাপড়া একটু কম করতে চাইলেও অলীদের জন্য সেটা পারেনা।
এর মধ্যে রাইসার বাড়ি যাওয়ার কথা থাকলেও সেদিনের চেয়ারম্যানের ছেলের ঘটনাটা মামার মুখে শোনার পর অলীদ বলে দিছে পরিক্ষার কয়েকদিন আগেই ও নিজে দিয়ে আসবে রাইসাকে,কিন্তু রাইসাকে এ সব জানতে দেওয়া হয়নি ।রাইসা বাড়ি যাবার কথা বললে ওকে ও অলীদ ঐ কথাই বলে রাখছে।এতে রাইসা তেমন প্রতিক্রিয়া দেখায়নি।
এখন আর রাইসা অলীদের ওপর একদমই রেগে নেই ।অলীদের সব রকম কেয়ারিং ওকে মুগ্ধ করে ।রাইসার মাও ওকে ফোন করে সবসময় একটা কথা বলে আর সেটা হলো অলীদের খেয়াল রাখা কেনোনা স্বামীকে বউয়ের সেবা করাটা জরুরি তাই রাইসা সেটাও করার চেষ্টা করে।
অলীদ সকালের নাস্তা করে চলে গেছে ,জমিলা দুপুরের রান্নার জন্য সব্জি কাটছে আর রাইসা পাশে বসে গল্প করছে ।আজকাল দু জনে একসাথে হলে গল্পটা বেশ জমে ওঠে।জমিলা তার স্বামীর গল্প শুনায় রাইসা অধীর আগ্রহ ভরা দৃষ্টি নিয়ে শুনতে থাকে, তারাও একসময় পছন্দ করে বিয়ে করে তারপরে এই শহরে পাড়ি জমায় ।তার স্বামী রিক্সা চালাতো ভালোই দিনকাল কাটছিলো কিন্তু হঠাৎ একটা এক্সিডেন্ট হলে আর রিক্সা চালাতে পারে না কখন থেকে জমিলা বাসায় বাসায় কাজ করে সংসার চালাতে থাকে ।এতো কষ্টের মাঝেও দুজনের ভালোবাসার কমতি নেই।
—বুঝছেন রাইসা মা সত্যিকারের ভালোবাসা শেষ হয় না ।আমার জায়গায় অন্য কেউ হলে তাকে ছেরে যেতো কিন্তু মানুষটা আমারে যেমন ভালোবাসে আমিও তাকে তার চাইতে বেশি ভালোবাসি।এ জন্য তাকে ভালোবাসা দিয়ে আগলে রেখেছি।যদিও সংসার সামলাতে নিজের একার কষ্ট হয় তবুও সে পাশে আছে এ সব কষ্ট আমার কাছে কষ্টই মনে হয় না।
বলতে বলতে চোখের পানি মুছতে লাগলো।
—একদম কাদবে না খালা আল্লাহ যা করে ভালোর জন্য ।
—রাইসা মা অলীদ বাবাও তোমাকে অনেক ভালোবাসে।এ কদিন তার মুখে তোমার কথা শুনে খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি।
কথাটা শুনে রাইসা লজ্জা পেলো কিছু বললো না।
—খালা আপনি রান্না করুন আমি রুমে যাই
—আচ্ছা।
~~~
বিকেলের শেষ প্রহর সময়টা বেশ ভালো লাগে রাইসার ।ঝমিলা চলে গেছে।বই নিয়ে কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করে আর ভালো লাগছিলো না বলে বারান্দায় গিয়ে বসে পরলো।আকাশটা দেখতে আজ খুব ভালো লাগছে।বলা যায় মনটা আজ ভালো তাই প্রকৃতি দেখতে ও ভালো লাগছে।অলীদের কথা ভাবছে।সে কখন আসবে?অবশ্য আসার সময় ঘনিয়ে আসছে তাই সেখান থেকে ওঠে রুমে গিয়ে একটা সুতি শাড়ি বের করে নিলো।সাধা শাড়ি নীল পাড়,সাদার ভিতর কাজ করা।বিয়েতে পাওয়া শাড়ি হয়তো অলীদই কিনেছিলো।
শাড়ী পড়ে হাল্কা করে সেজে নিলো।রাইসার সাজগোজ অনেক পছন্দ যদিও প্রকাশ্যে পারেনি আর সেটা করতে গিয়ে ছোটো বেলা অলীদের কাছ থেকে চর উপহার পেয়ে এর পরে আর সাজেনি।কিন্তু এখন তো আর বিধিনিষেধ নেই।শুনেছে স্বামীর সামনেই বেশি সেজেগুজে যেতে হয়।সাজগোজ সেরে আবার বারান্দায় গিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো ,কখন মানুষটা আসবে ?
ভাবতে ভাবতে মানুষটা চলে আসলো বাড়ির মেইন গেট দিয়ে ঢুকতেই রাইসা উৎফুল্ল মনে দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।কলিং বেল বাজতেই দরজা খুলে দিলো।গেট খুলতেই অলীদ রাইসা কে একনজর দেখেই ঝটকা খেলো মনে হলো কারেন্ট এর শক খাইছে।রাইসা অলীদের কাঁধের ব্যাগ টা নিয়ে নিলো।
কি হচ্ছে আর কি দেখছে মনে হচ্ছে অলীদ স্বপ্ন দেখছে।মেয়েটা দিন দিন স্বাভাবিক হচ্ছে সেটা ঠিক আছে কিন্তু সাথে সাথে তার রুপ ও চেন্জ হচ্ছে।এমন হলে তো অলীদের নিজেকে সামলানো কঠিন হয়ে পরবে।
ভিতরে ডুকে চেয়ারে বসে জুতো খুলতে গেলে রাইসা এসে বাধা দিয়ে নিজে জুতো মুজা খুলে দেয় আর বলতে থাকে
—আজ থেকে আপনার সব কাজ আমি করে দিবো এ সব আর আপনি করবেন না।
অলীদ এবার ও শকে আছে কি ঘটতেছে তার সাথে।
—রাইসা তুমি ঠিক আছো তা ?
—কেনো আপনার কি মনে হয় আমি অসুস্থ্য ?
—না তা নয় মানে বলছিলাম
—আর মানে মানে করতে হবে না আমি তো আপনার বউ এ সব তো আমাকেই করতে হবে তা ছাড়া এটা করা আমার কর্তব্য।
বাদ দেন এ সব ,আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন।এই নিন তোয়ালে আর আমি চা করে নিয়ে আসতেছি
—শোনো…
—জ্বী বলুন”
—আজ তোমাকে মা শাহ আল্লাহ অনেক সুন্দর লাগছে
কথা গুলো শুনে রাইসার ওপর একরাশ লজ্জা ভর করছে।কিছু বলতে পারছে না মুচকি হেসে চলে গেলো ।অলীদ ওর অবস্থা দেখে হাসলো।অলীদ ফ্রেশ হয়ে বেডে বসে মাথার চুল ঠিক করছিলো,রাইসা দুকাপ চা নিয়ে রুমে ঢুকে এক কাপ অলীদকে এগিয়ে দিলো।
—আজ চা টা বানানোর সময় চেক করেছো তো?
—হুম চিন্তা মুক্ত হয়ে খেতে পারেন
চায়ের চুমুক দিয়ে
—বাহ আজকের চা টা খুব ভালো হয়েছে
—সত্যি ?
—হুম,
নিজেও খেয়ে দেখে নাহ আজ ভালোই হয়েছে তবে যতোটা ভালো বলছে ততোটা না।একটু বেশি বলেছে হয়তো খুশি করার জন্য ।
—পড়াশুনা করেছো নাকি খালার সাথে আড্ডা দিয়েছো ?
—দুটোই করেছি ।
—আপনি এখন রেস্ট করেন
বলে রাইসা উঠতে গেলে ওর হাতটা ধরে বসে অলীদ
—কিছু বলবেন ?
—পাশে বসো
রাইসা পাশে বসলো কিন্তু বুকটা ধুরু ধুরু করছে কি বলবে সে
—রাইসা আমি চাই তুমি সবসময় খুশিতে থাকো,মানে আমি চেষ্টা করবো সবটা দিয়ে।তোমার কোনো রাগ নেই তো আমার প্রতি ?
—ছি কি বলছেন এসব,আমি অনেক খুশি আছি ।
—সত্যি বলছো ?
—হা সত্যি
অলীদ ওর দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে কিন্তু রাইসা বেশি ক্ষণ চেয়ে থাকতে পারলো না লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো।অলীদ ওর থুতনি ধরে উঁচু করলো কিন্তু রাইসা চোখ বন্ধ করে রইলো।আজ অলীদ নিজেকে সামলিয়ে রাখতে পারছে না।ওর মনে বলো দূরত্বটা আজই ঘুচে দিবে।অলীদের ঘনো নিঃশ্বাস রাইসার মুখে পরতেই চোখ খুলে ফেললো।অধরে অধর ছুঁই ছুঁই প্রায় কিন্তু রাইসার কি হলো কে জানে।আচমকা মৃধু ধাক্কা দিয়ে বারান্দায় গিয়ে দাড়ালো আর হাফসাতে লাগলো।এতো দিনে এই প্রথম এতোটা কাছে আসতে লাগলো ভয় আর লজ্জা দুটোই মনের মাঝে কাজ করছে।
অলীদ বুঝতে পারেনি এমনটা হবে কিন্তু আজ অলীদ ও দুরে সরে যাবে না উঠে গিয়ে রাইসার পিছনে গিয়ে দাড়ালো আস্তে আস্তে এগিয়ে এসে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে চুলে নাক ডুবিয়ে দিলো একসময় চুল একপাশে সরিয়ে ঘারে নাক ঘসতে লাগলো।অলীদের এমন কাজে রাইসা পাগল প্রায় মনে হচ্ছে শ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে ।আর সহ্য করতে না পেরে রাইসা সামনে ফিরে অলীদকে জড়িয়ে ধরলো সেও তার প্রিয়তমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।কয়েক মিনিট যেতে অলীদ হুসে আসলো আবার মনে হলো নাহ এখন নাহ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।আর তো কয়টা দিন মেয়েটার পরিক্ষা শেষ হোক তার পর না হয় কাছে টেনে নিবে।তাছাড়া কাছেই তো আছে”মুহূর্ত স্বাভাবিক করতে অলীদ বললো—
—চলোনা আজ একটু ছাদে যাই তুমিতো এখনও ছাদে যাওনি
—কিন্তু আজান হবে তো কিছুক্ষণ পরে
—সমস্যা নেই এখনও অনেকটা সময় বাকি
—ঠিক আছে চলেন
ছাদে উঠে রাইসা অনেক খুশি,বেশ বড়ো ছাদটা আর বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগানো আর অনেক গাছে ফুল ফুটছে ।
—আপনার ফোন টা দিন ছবি তুলবো
রাইসা ফোন নিয়ে গাছের অনেক ছবি নিলো সাথে নিজের আর অলীদের সাথেও কিছু সেলফি তুললো যদিও অলীদ কখনও নিজ ইচ্ছায় দুজনের ছবি তুলেনি বা ইচ্ছা পোষণ ও করেনি কিন্তু আজ না ও বলেনি।রাইসার হাসি খুশি এমন দৃশ্য দেখে অলীদ ও খুশি।সারাজীবন এমনটাই রাখতে চায় ও।কিছুক্ষণ পরেই আজান হলে দুজনে নেমে রুমে গিয়ে নামাজ পড়ে নিলো।
সন্ধ্যার পরে রাইসা পড়তে বসলো কিন্তু বিকেলের ঘটনা গুলে মনে পরতেই ক্ষণে ক্ষণে হাসছে আর কলম মুখে নিয়ে কামড়াচ্ছে।পাশেই অলীদ ওর অফিসিয়াল কাজ করছে কিন্তু রাইসার ব্যাপারটা অলীদ লক্ষ্য করছে ।
—কি হলো পড়া বাদ দিয়ে কি ভাবছো ?
—কিছুনা
—উহুম কিছু তো একটা যাই হোক সব কিছু মন থেকে ঝেরে ফেলে দাও।বইয়ে মন দাও ।
রাইসা মনে মনে ভাবছে “শুধু পড়া আর পড়া ভালো লাগে না কবে যে পরিক্ষাটা শেষ হবে? হলেই বাচি উফ,,
—যাই ভাবে না কেনো কোনো লাভ নেই আপাততো এটাই মন দিয়ে করো।বাকিটা পরে হবে বলে কাজে মন দিলো ঠিকই কিন্তু নিজে নিজেই হাসতে লাগলো।যদিও রাইসা টের পেলো না।
রাতের খাবার খেয়ে দুজন শুয়ে পরলো।অন্যদিনের মতো অলীদ আজও রাইসার ঘুমের পরে রাতে উঠে গিয়ে পাশের রুমে শুয়ে পরলো।খুব ভোরে অলীদ উঠে নামাজ পরে রাইসাকে ডেকে আবার রুমে শুয়ে পরলো।রাইসা নামাজ পরে আর না শুয়ে নিজ হাতে নাস্তা বানালো।
আজ শুক্রবার আর জমিলা খালাও আজ কোনো একটা কারনে আসতে পারবে না তাই ভেবে রেখেছে দুপুরের রান্নাও রাইসা করে নিবে।
সকালের নাস্তা সেরে নিলো দুজনে ,
—একটু আপনাদের বাড়ি কল দিবেন বাবা মা আর মিমি ওদের সাথে কথা বলবো।
অলীদ কল দিয়ে মোবাইল হাতে দিলো ,অনেকক্ষণ সবার সাথে কথা বললো।কথা বলা শেষে অলীদ একটু বাইরে যাবে বললে তখন রাইসা বললো
—শুনেন আজ শাহরিয়র ভাইকে বলবেন দুপুরে যেনো খায় এখানে।
—আচ্ছা ঠিক আছে
অলীদ বাইরে গেলে রাইসা দুপুরের রান্না সেরে ফেললো ,রুমগুলোও গোজগাজ করে রাখলো।
বাইর থেকে অলীদ এসে গোসল করে আবার নামাজ পড়তে চলে গেলো।এই ফাকে রাইসাও ফ্রেশ হয়ে নিলো।নামাজ পড়ে অলীদ আসলো এরপরই শাহরিয়র ও চলে আসলো।
—কি ব্যাপার রে আজ জরুরী তলব করছিস যে
—হুম তোর ভাবি তলব করছে
—ওর তাই বল
অলিদ খাবার রুমে এসে জমিলা খালাকে ডাকতে শুরু করলো ।রাইসা একে একে রান্না ঘর থেকে খাবার এনে রাখতে শুরু করছে,
—আজ খালা আসেনি তার বাসায় একটু সমস্যা তাই
—কি বলো তার মানে এতো রান্না তুমি করেছো ?
—হা কি মনে হয় আমি পারিনা
—না তা নয়
—আর কথা বলিস না তো ভাবির হাতের রান্না দেখেই ক্ষুদা দ্বিগুন বেড়ে গেছে এই আমি শুরু করলাম বলে খেতে লাগলো।
অলীদ ও রাইসাকে একসাথে বসতে বলে খেতে লাগলো।সত্যি অনেক মজা হইছে।শাহরিয়র তো খাচ্ছে আর প্রশংসায় ভাসিয়ে দিচ্ছে ।রাইসা শুধু শুনছে কিছু বলছে না শুধু খাবার তুলে দিচ্ছে।খাবার শেষে কিছুসময় গল্প করে শাহরিয়র চলে গেলো।
অলীদ এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।মনে হচ্ছে বেশি খেয়ে ফেলছে।রাইসা রুমে ডুকতেই-
—এতো ভালো রান্না শিখলে কবে?
—শিখা লাগে না ইচ্ছেটাই যথেষ্ট।ভালো লেগেছে এটাই সার্থকতা।আসলে মেয়েদের এমনিতেই সংসার হলে সবটাই আল্লাহ করার ক্ষমতা দিয়ে দেয়।
—হুম তাই তো দেখছি।আচ্ছা শোনো
বিকেলে যাবে ঘুরতে?
—সত্যি নিয়ে যাবেন ?কোথায় যাবেন বলেন?
—চলো তোমাকে আজ লেকের পাড়ে ঘুরতে নিয়ে যাবো ।
রাইসা বেশ খুশি হলো।
—তা হলে রেডি হই
—হুম ঠিক আছে।
রাইসা আজ অলীদের দেওয়া বোরখা আর হিজাব পরে নিলো।দুজনে রেডি হয়ে বের হলো।অলীদ চায় বন্ধের দিনগুলোতে রাইসাকে নিয়ে এভাবে সবসময় বের হবে।তা হলে মন মানসিকতাও অনেক ভালো থাকবে ।অবশ্য এটা ও মনে মনেই রেখেছে আর ও খুব ভালো করেই জানে রাইসাও ঘুরতে বেশ পছন্দ করে।
সিএনজি ঠিক করে উঠে পরলো ,ধানমন্ডি লেকে যাবে।ঘন্টা খানেক লাগলো যদিও এতে সময় লাগার কথা না কিন্তু জ্যামের কারনে এতোটা সময় লাগলো।অবশেষে সেখানে পৌছে গেলো।দুজনে হাটতে লাগলো,আজ অনেক মানুষ এখানে ঘুরতে এসেছে শুক্রবার সেজন্য ।অনেকক্ষণ ঘোরাঘুরি করে ওখান থেকে বের হয়ে একটা ফুসকা স্টলে ডুকলো।তবে আজ রাইসা ফুচকা খাবে কিন্তু অলীদ খাবে না কিন্তু রাইসার জোড়াজুড়িতে চটপটি নিলো তাও ঝাল কম দিয়ে আর রাইসা তো কড়া ঝাল দিয়ে ফুচকা খেয়ে ঝালে অবস্থা খারাপ । ফর্সা চেহারা ঝালে আরো লাল টমেটোর মতো হয়ে গেছে । ঠান্ডা পানিতে কাজ না হলে আইসক্রিম কিনে দিলো শেষে আইসক্রিম খেয়ে একটু কমলে দুজন ওখান থেকে বের হলো।তবে অলীদ বেশ কয়েক বার রাইসা কে রাগ করছে এতো ঝাল না খেতে কিন্তু মেয়েটা শুনলো না কোনো কথা।
বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে নিলো দুজন ।এর মধ্যে রাইসার বাবা ফোন করলে বাড়ির সবার সাথে রাইসা আর অলীদ কথা বললো।
সন্ধ্যার পরেই রাইসা বেডে বসেই পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে গেলো।রাতে আর অলীদ ওকে না ডেকে নিজেও লাইট অফ পাশের রুমে চলে গেলো।ও জানে এই মেয়ে এক বার ঘুমালে আর হাজার ডাক দিলেও খেতে উঠবে না।
রাত গভীর তখন ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন দেখে চিৎকার করে ঘুম ভাঙলো রাইসার ।চোখ মেলে অন্ধকারে হাফাতে লাগলো।মাথার ওপর ফ্যান ঘুরছে তাও মনে হচ্ছে ঘেমে ভিজে যাচ্ছে ।চিৎকার শুনেই অলীদ দৌড়ে এসে লাইট অন করে।সামনে যেতেই রাইসা ওকে জড়িয়ে ধরলো।
—কই ছিলেন আপনি ?
—এই তো একটু রুমের বাইরে ছিলাম।পাশের রুমে শোয়ার কথা তো বলা যাবে না ।ভয় পায় না আমি আছি তো ।মনে হয় খারাপ স্বপ্ন দেখছো তুমি।
কিন্তু রাইসা কোনো মতে স্বাভাবিক হচ্ছে না।কি করবে এই মুহূর্তে অলীদ ভেবে পাচ্ছে না।এখন ওকে শান্ত করতে হবে যে ভাবে হোক অলীদ উপায় না পেয়ে রাইসার অধরে অধর মিলিয়ে দিলো।এমনটা হওয়ায় রাইসা হুসে আসলো।ও ভাবতেই পারছে না এমনটা হচ্ছে।প্রায় অনেক ক্ষণ দুজন অধরের সুখ নিতে থাকলো।কিন্তু আজ তো অলীদ আর নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারলো না।আদরে আদরে ভরিয়ে দিতে লাগলো ভালোবাসার মানুষটাকে,ধিরে ধিরে প্রিয়তমার মধ্যে হারিয়ে যেতে লাগলো।রাইসা তো আগে থেকেই চায় ওর সবটা দিয়ে অলীদকে ভালোবাসার সাগরে ভাসাতে।আজ সেই শুভ ক্ষণ দুজন দুজনের ভালোবাসা বিনিময় করতে ব্যস্ত।বাকী রাতটা মধুময় সুন্দর একটা রাতের স্মৃতি হয়ে থাকলো।
ক্রমশ…..
সম্পূর্ণ গল্প পড়তে চান?
Click here to read the full story.Sponsored

🛍️Carnatio Academy
unlock your potential with premium courses — now available at up to 50% off. Don't miss out!.
https://academy.carnationplus.in/
Explore Categories
Post Views: 27