হঠাৎ এমন প্রশ্নে কুহু তব্দা খেয়ে গেলো। সে রোহানের দিকে তাকালো এই নিয়ে দ্বিতীয় বার এর মতো কুহু তাকালো রোহানের চোখে। ধাড়ালো সূঁচ এর মতো তার চোখ গুলো। এই চোখের দিকে তাকাতে কুহুর কলিজাতে গিয়ে লাগে। ফের আবার চোখ নামিয়ে বললো,, আমি কোন ফাঁকি দেই না। A+ পেয়ে পাস করেছিলাম।
A+ পেয়েও কি তোর ভাগ্যে ভালো কোন কলেজে জুটে নাই। এমন বাজে কলেজে চান্স পেলি।
জুটেছে বাড়ির সামনে এইটা তাই এইটাতেই ভর্তি হয়েছি।
আচ্ছা যা। এই শুন?
হুম..!
তোর কলেজ কখন ছুটি হবে ৪ টায়।
কিন্তু আজ তো বাড়িতে অনুষ্ঠান তাড়াতাড়ি ফিরবি না।
নাহ্ আজ ক্লাস গুলো করতেই হবে। সামনে পরীক্ষা। আসছি আমি বলে চলে যেতে নিলে রোহান কুহুর হাত ধরে দাঁড় করিয়ে দিয়ে তারপর পকেট থেকে মানিব্যাগ টা বের করে সেইখান থেকে কিছু টাকা বের করে কুহুর হাতে ধরিয়ে দিলো।
আরে কি করছেন লাগবে না তো টাকা।
তো লাগবে কি লাগবে না আমি জিগাইছি। আমার মন চাইছে আমি দিছি এখন এইটা লাগানো না লাগানো তোর ব্যাপার।
রোহান কে ভাষায় কথা বলতে দেখে কুহুর চোখ কপালে উঠার মতো হলো।
কিরে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো যা।
কুহু পিছন ফিরে সামনের দিকে হাঁটা দিলো। কুহুর যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে রোহান। যতক্ষণ না চোখের অদৃশ্য হচ্ছে ততক্ষণ তাকিয়ে ছিলো। কুহু অদৃশ্য হতে ই রোহান বলে উঠলো,,
❝ তুই আড়াল হলে আমার অন্তর প্রতিনিয়ত দগ্ধ হয়❞ কুহুরানী তোর কোন দিন ও মনে পড়বে না তোর আর আমাদের বিয়ের কথা। সমস্যা নেই তুই ভুলে গেলেও আমি মনে করিয়ে দিবো তোকে। তোর ফেলে আসার একটা অতীতের অংশ আমি। রোহান তার গাড়ি উঠে বসে গাড়িটা র্স্টাট দিলো। এক জায়গায় যেতে হবে তার। দুপুরের আগে শেষ করে তারপর বাড়ি যেতে হবে। আর মনে মনে ভাবছে এই কলেজ নিরাপদ না কুহুর জন্য এইখানে কোন সেফটি নেই। যতসব বখাটে ভরা। রোহান এক সাইডে গাড়ি টা থামিয়ে দিয়ে সোহেল কে মেসেজ করে বললো কুহুর কলেজের আশেপাশে লোক লাগিয়ে রাখতে যাতে কুহুর সব খবর নিতে পারে। মেসেজ টা করে ফোনটা পাশের সিটে রেখে আবার গাড়ি স্টার্ট করলো।
—
অচেনা একটা জায়গায় রোহানের গাড়ি টা থামলো। রোহানের পিছনে আর দুজন লোক এসেছে বাইকে করে। এলাকা টা তে ভালো করে নজর দিচ্ছে রোহান। খুব একটা সুবিধার না। মত্ত-মাতালের অস্থানা। রোহান একটা ছবি নিয়ে আর সাথে রি”ভে”ল”বার টা সাথে নিয়ে গাড়ি থেকে নামলো। তবে রোহানের দক্ষ মন টা বলছে একটা দাঙ্গা হবে। তাই রোহান তার সাথে আসার লোক দুটো কে আগে থেকে ই সচেতন করে দিলো। আর বললো ওর সাথে প্রতিনিয়ত কারনেট থাকতে আর লোকেশন টা অন করে রাখতে যাতে একে অপরের ঢাল হয়ে থাকতে পারে। সামনে এক দোকান দেখে রোহান সেই দিকে গেলো তারপর একটা ছবি বের করে বললো,, চিনেন?
লোকটে একবার ছবির দিকে তো একবার রোহানের দিকে তাকিয়ে বললো,,, আপনার কি দরকার?
আমার কি দরকার সেইটা জানার তোর কাজ না তোকে যা জিজ্ঞেস করেছি তুই সেইটা বললো। রোহান বুঝলো লোকটি চিনে কিন্তু বলবে না তাই সে পকেট থেকে কিছু টাকা বের করে সেই লোকটার হাতে নিয়ে বললো,,, এইবার বলে দে। ভালো ভালো বলে দিলে ভালো নয়তো আমি মানুষ টা বেশি সুবিধার নার। তোর জন্য ক্ষতিকর হবে। রোহানের শান্ত কন্ঠে হুমকি বার্তা টা শুনে বুঝে গেলো লোকটা বললো সামনে একটা ক্লাব ঘর আছে ওখানেই পাবেন। মদ খেয়ে হয়তো বেহুশ হয়ে পরে আছে।
রোহান একটু ক্রুর হেঁসে বললো ভেরি গুড। তারপর তার সাথের দুজন লোকটি কে জানান দিয়ে সে সামনের দিকে অগ্রসর হতে লাগলো। কিন্তু ওর মন বলছে আনাচে-কানাচেতে উৎপেতে আছে বিপদ যার আবাস সে পাচ্ছে।
যত সামনের দিকে আগাচ্ছে তত ওর মনে হচ্ছে কেউ ওকে ফল করছে তাই সে তৎক্ষনাৎ পিছন ফিরে তাকালো তাকিয়ে দেখলো তিন টা চ্যাংলা পোলা। রোহান কোমরে হাত দিয়ে ওদের দিকে ভ্রুঁ কুচকে তাকায় তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে কি হইছে?
কি হইছি তুই এসে কইবি? আমাগো বসেরে খুঁজতাছোত কেরে?
ওদের কথার ধরন শুনে ওর হাসি পেলো। রোহান ঠোঁট কামড়িয়ে ক্ষানিকটা হেঁসে বললো,,, তোদের বস কে নিয়ে যেতে এসেছি কি করবি তোরা?
আয় তো দেখি কত শক্তি পারোস কি না?
এই টুকু ছেলে রা তাকে যুদ্ধে আহ্বান করছে তার বেশ মানে লাগলো। সেও মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো। প্রথমে একটা ছেলে এগিয়ে এসে হ”কি”স্টি”ক দিয়ে মা”র”তে নিলে সে সড়ে গিয়ে ওর হাতটা মুচড়ে দিয়ে ভেঙে দিলো। হার টা মর্মর শব্দ করে উঠলো। ভ্রুঁ জোড়া নাচিয়ে বাকি দুই জন কে জিজ্ঞেস করলো,, কি রে লাগবি আমার সাথে তোদের হাড্ডি-গুড্ডি ও কিন্তু ভেঙে ফেলবো। কি রে আসবি না কি?
বাকি দুইজনের হাওয়া ফুঁস হয়ে গেলো। মুখটা ভয়ে চুপসে গেলো। ওরা আর এইখানে দাঁড়ালো না দৌড়ে চলে গেলো। রোহানের হাসি পেলো। রোহানের সাথে বাকি দুইজন এসে বললো কি হয়েছে স্যার?
কিছুনা হাল্কা পাতলা ঝামেলা চলো সামনে যেই ক্লাব আছে সেই যেতে হবে সেই খানে গেলে দেখা মিলবে তার। তিন জন মিলে ক্লাবে গেলো। কত কম বয়সী ছেলে রা এই ক্লাবে নে”শা”গ্র”স্ত হয়ে পরে আছে। ওরা তিনজন ক্লাবের এদিক সেদিক দেখতে লাগলো দূরে একটা টেবিলের উপর নজর পরতে রোহান বললো ওই তো মা”ল খেয়ে টাল হয়ে গেছে চলো তুলতে হবে বলে এগিয়ে গেলো সেই টেবিলের কাছে। লোক দুজন বললো স্যার ওর তো কো হুঁশ নেই কিভাবে নিয়ে যাবো যদি কেউ দেখে নেয় তাহলে তো ঝামেলা হবে।
হবে না। রোহান তার কাঁধে ব্যাগ টা খুলে একটা বোরকা বের করে দিয়ে বলো এইটা পড়িয়ে সুন্দর করে মুখটা বেঁধে দেও নিকাব এর সাহায্যে তাহলেই হলো। লোক দুটো রোহানের কথা মতো তাই করলো। তারপর খুব সচেতনের সাথে লোকটা নিয়ে বের হয়ে গাড়িতে উঠিয়ে বসে পড়লো। দ্রুত সম্ভব গাড়িটা নিয়ে বের হয়ে যেতে হবে। রোহান গাড়ি টা স্টার্ট দিলো আর ওর সাথে লোক দুটো বাইক করে যাচ্ছে।
—
রোহান তার কাজ গুলো শেষ করে বাড়ি ফিরলো। বাড়ি ফিরতেই দেখলো রোহানের ফুফু বসে আছে সোফায়। রোহান দেখেও না দেখার ভান করে চলে যাচ্ছিলো। কিন্তু সেইটা হয়তো রোহানের ফুফুর সহ্য হলো না তাই স্বইচ্ছে বিপদ নিজের ঘাড়ে ডাকলো। রোহান যাচ্ছিল ঠিক সেই সময় তার ফুফু বলে উঠলো,, তুই কি বেয়াদব হয়ে যাচ্ছিস? তুই তোর চাচি কে না খেয়ে থাকতে বলেছিস?
বলেছি তো চাচি কে তোমার শরীরে লাগছে কেনো? নাকি চাচির ভাগের শাস্তি তুমি নিতে চাইছো সমস্যা নেই আমি দিয়ে দিবো কি নিবে না কি চাচির ভাগের শাস্তি?
তোমরা কি? তোমাদের অন্যয় ক্রমশ প্রকাশ্য তোমাদের ভদ্র মুখোশের আড়ালে কুৎসিত মুখ টা সবার সামনে প্রকাশ পাবে। সত্য কখনো চাপা থাকে না। সব সত্যি প্রকাশ পাবে তোমরা তিন ভাই বোন মিলে যেইটা করেছো সেইটা আর একজন তো আছেই মা নামে কলঙ্ক। মনে রেখো তোমাদের রাতের আধারে নোংরা কুৎসিত খেলা শেষ হবে। তোমাদের এমন অবস্থা করবো যাতে সমাজের প্রতিটা মানুষ তোমাদের দেখলে ঘৃণায় থু থু ফেলে তোমাদের মুখে। তোমরা নামেই মানুষ ই কিন্তু কাজে কর্মে পুরো অমানুষ। জমিদারের বংশরা বুঝি অমানুষ তৈরি হয়। উঁহুম সবাই না তাহলে আমি ও অমানুষ তৈরি হতাম। আমার রক্তের সাথে মায়ের পবিত্র রক্ত লেগে আছে তাই আমি মানুষের পরিণত হয়েছি। সবার প্রতি হয়ে যাওয়ার অবিচারের সুবিচার করবো। শুধু আগে থেকে প্রিপারেশন নেও মাই ডিয়ার শ”য়”তা”নি ফুফুমনি আসি টাটা বলে চলে গেলো উপরে।
রোহানের কথা গুলো শুনে ওর ফুফু খুব চিন্তিত হয়ে পড়লো কতটা জানে কি জানে। ভাবতে ভাবতে তিনি চলে গেলেন মেয়ের রুমে। দরজা টা একটু ফাঁক করে দেখলো ঘুমিয়ে আছে। ফর্সা শরীরে ক্ষ”ত গুলো কালচে রং ধারন করেছে। তিনি সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নিলো।
আস্তে আস্তে মেয়ের বাড়ি থেকে লোক আসা শুরু করলো। ঘরোয়া ভাবে বৌ-ভাত টা হচ্ছে। বাড়ির মানুষগুলো ছাড়া আর কেউ না।
সবাই একসাথে খেতে বসেছে। শ্রাবনী এই দিক সেই দিক তাকাচ্ছে বার বার রোহান সেইটা লক্ষ করে বললো,, ভাবীমা তুমি কাকে খুঁজছো। তোমার বর তো তোমার পাশে।
শ্রাবনী একটু হেঁসে বললো,, কুহু কে খুঁজছি।
ওর আসতে আসতে বিকাল হবে আমাকে বলেছে। সামনে নাকি পরীক্ষা। তাই সব গুলো ক্লাস করতে ই হবে।
শ্রাবনী ভাতের লোকমা মুখে দিতে দিতে বললো,, ওহ্।
স্মৃতি বললো কি আর করবে,, আপুমনি তো আর প্রাইভেইট পড়ে না। শুধু কোচিং করে আর লাইব্রেরি থেকে বই কালেক্ট করে নোট করে সেইটা পড়ে। আমি দেখেছি একবার হাত পুড়ে গেছিলো সেই পুড়া হাত টা নিয়ে আপুমনি সারারাত নোট করে তারপরের দিন সকালে কলেজে জমা দিয়ে এসেছিলো বই টা।
রোহান জানেনা কেনো এইটা। ওকে কেনো বলে নাই এইটা। রোহান ক্ষিপ্ত নজরে তার ভাই এর দিকে তাকালো তার ভাই শুধু একটা কেবলা ক্রান্ত হাসি দিলো।
রওনক আর শ্রাবনী নিয়ম রক্ষার্থে ওদের সাথে রওনা দিলো। কুহুর মা আর সৎ বাবা চলে যাওয়া সময় রোহানের দিকে একবার চোখা-চোখি হলো। ওরা কিছু বলে নি বিধায় রোহান ও কিছু বলে নি। রোহান মনে মনে বললো,, আপদ বিদায় হচ্ছে। এখন শুধু ফুফুর যাওয়ার পালা।
—
কুহু হাতে বই নিয়ে ব্যস্ত পায়ে হেঁট যাচ্ছে। রাস্তার মোড়ে এসে রোহান কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে একটু থতমত খেলো। কুহু কে দেখে রোহান বললো,, এই সমস্যা কি এতো লেট করেছিস কেনো? আর তুই পা এ হেঁটে কেনো বাসায় ফিরছিস তোকে আমি টাকা দিয়ে এসেছি রিকশা দিয়ে চলে আসতি।
এতো গুলো প্রশ্ন এক সাথে শুনে কুহু একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলো তারপর একটা ফাঁকা ঢোঁক গিলে গিলে বললো,, এইতো বাড়ির কাছে ই তো কলেজে তাই আর রিকশা নেই নি। তাছাড়া আজ প্রাইভেট পড়ানো ছিলো প্রাইভেট পড়াতে গেছিলাম।
তোর প্রাইভেট কেনো পড়াতে হবে আমি তো আছি ই যখন যা লাগবে আমাকে বলবি আমি দিবো।
কেনো আপনার টাকা কেনো নিবো?
খু্ব সিম্পল আমার টাকা মানে তোর টাকা।
কুহু আর কিছু বললো না এমনিতেও ওর কথা বলার এনার্জি নেই। রোহান এই টা সেইটা বলছে আর কুহু চুপচাপ শুনছে। অবশেষে ওরা বাড়িতে এসে পৌঁছালো। বাড়িতে পৌঁছাতেই যেনো কুহু হাফ ছেড়ে বাঁচলো। কুহু ক্লান্ত পা নিয়ে রুমে চলে গেলো। রুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে নিয়ে তারপর পড়ার টেবিলে বসলো বই নিয়ে। অনেক পড়তে হবে কিছু চ্যাপ্টা টা শেষ করা হয়নি এখন সেই গুলো পড়ে শেষ করতে হবে।
পড়া যখন অর্ধেক তখন চারোদিকে মাগরিবের আজান এর ধ্বনি শুনা যাচ্ছে। কুহু বই টা বন্ধ করে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসতে ই ঘুমিয়ে পড়লো। ল্যাপটপের স্কিনে কুহুর ক্লান্তি মাখা ঘুমন্ত মুখ টা দেখে একটা শ্বাঃস ফেরলো রোহান তারপর সে তার রুম থেকে বের হয়ে কুহুর রুমে এসে কুহু কোলে তুলে বিছানায় শুয়ে দিয়ে কম্বল টা টেনে দিলো। এক গুচ্ছ চুল এসে পড়লো কুহুর মুখে রোহান খুব সুন্দর করে সেই চুল গুলো সড়িয়ে দিয়ে কপালে গাঢ় চুম্বন দিলো। তারপর চেয়ার টা টেনে বসে পড়লো কুহুর নিকটে তারপর কুহুর হাত টা টেনে ধরে বুকের বাম পাশে রেখে বললো,,, জানিস কুহু কাল আমাকে কাজের সূত্রে ইন্ডিয়াতে যেতে হবে। কিন্তু এই শত্রুপুরিতে তোকে রেখে যেতে ইচ্ছে করছে না কিন্তু চিন্তা করিস না তোকে আমি দূর থেকে ই আগলে রাখবো।
❝ জানিস কুহু
তোর থেকে দূরে যাবো কথা টা ভাবতেই আমার শ্বাঃস কষ্ট শুরু হয় মনে হয় আমি কোন এজমা আক্রান্ত রোগী অক্সিজেনের অভাবে মা”রা যাবো। মনতো বলছে থেকে যেতে কিন্তু বাহির টা বলছে তোকে যেতে হবে তুই তোর দায়িত্ব নিয়ে অবহেলা করেতে পারিস না❞ ঘুমা তুই আমি আছি তো তোর পাশে। চিন্তা কিসের আমি থাকতে তোর শরীরে একটা কাঁটাে
টোকা ও পড়তে দিবো না। আমার কুহুরানী তোকে অনেক ভালোবাসি।
❝জানিনা কি আছে তোর মাঝে তবে যত দেখি
তোর ই মুখ হারিয়ে যায় আমার সব দুঃখ ❞ আমি পৃথিবীর সব থেকে সুখি ব্যক্তি যাকে সেই কৈশোর কাল থেকে মন প্রাণ উজার করে ভালোবেসেছি আজ তাকে ই পেয়েছি। আমি খুব ভাগ্যবান রে কুহু। তোর জন্য গোটা দুনিয়ায় সাথে লড়াই করতে পারবো। তুই শুধু ই একান্ত আমার। আমার মায়াবতী,, আমার হৃদয়হরনী,, আমার প্রিয়তমা স্ত্রী তোকে অনেক ভালোবাসিরে। তোর নামে দলিল করে দিলাম নিজেকে। আর তোর সবকিছু আমি দলিল করে নিলাম আমার নামে।
আজ সাত টা দিন হলো রোহান বাড়িতে নেই। কুহুর খুব ভয় লাগতে শুরু করলো। রোহান বাড়িতে থাকলে কুহু অবশ্য নিজেকে নিরাপদ ফিল করে। কিন্তু আজ সাতটা দিন ধরে কুহু নিজেকে অনিরাপদ ফিল করছে। ওর মনে হচ্ছে আশে পাশে ওর জন্য বিপদ ওতপেতে রয়েছে। ওর মনে হচ্ছে একদল হা”য়”নারা এসে বুঝি ওর উপর আক্রমন করবে এর কারন আছে অবশ্য রাজীব আর সজীব ওর দিকে বাজে দৃষ্টিতে তাকায়। দুই একবার শরীরে হাত দেওয়ার ও চেষ্টা করেছে। রোহান কবে আসবে ইন্ডিয়া থেকে এইটা কেউ জানেনা। কিন্তু কুহুর জানা নেই দূর থেকে ওর বিষন্ন মন টা দেখে একজনের যে হৃদয় পুড়ছে। রোহান দ্রুত ফোনটা হাতে নিয়ে কল দিলো স্মৃতি কে অসময়ে তার ভাই কল করেছে এইটা ভেবেই সে তাড়াতাড়ি ফোন টা রিসিভ করলো,, হ্যালো বলার আগে রোহান স্মৃতি কে বললো,, কতবার বলেছি না কুহুকে একা রাখবি না কোন সাহসে কুহুকে একা রাখলি। আর গিয়ে জিজ্ঞেস কর কুহুর মন খারাপ কেনো? আজ রাতে আর তোকে এই রুমে থাকতে হবে না কুহুর রুমে থাকবি। বুঝতে পেরেছিস কথা টা বলে ফোনটা কেটে দিলো। সারাদিন অনেক ধকল গেছে এখন ফ্রেশ হওয়া দরকার তাই রোহান আলমারি টা খুলে এক সেট কাপড় টা নিয়ে গেলো ফ্রেশ হতে।
রোহানের কথা মতো স্মৃতি কুহুর রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে দরজা টা কড়া নাড়লো। কুহু ভীতসন্ত্রস্ত কন্ঠে বললো,,, কে?
আপুমনি আমি স্মৃতি দরজা টা খুলো।
স্মৃতির কণ্ঠস্বর শুনে মনে মনে স্বস্তি পেলো কুহু। দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেলো দরজার কাছে। তারপর খট করে দরজা টা খুলে দিলো। স্মৃতি রুমে ঢুকতে দরজা টা লাগিয়ে দিলো। কুহু স্মৃতির মাথায় গাট্টা মে”রে বললো,, ওই মেয়ে কাল যে তোমার স্কুল আছে ভুলে গেছো পড়া-লেখা কি চান্দের দেশে তুইলা দিছ।
ঘুম আসছিলো না তাই এলাম চলো না আমরা মুভি দেখি।
এই মেয়ে রাত এক টা বাজে এখন কিসের মুভি আসো ঘুমিয়ে পড়ি কাল সকালে তোমার স্কুল আছে আমার কলেজ। তিন দিন পর থেকে আমার পরীক্ষা। আসো ঘুমিয়ে পড়ি বলে দুইজন বিছানায় শুয়ে পড়লো।
রোহান ফ্রেশ হয়ে এসে ল্যাপটপে স্কিন দেখো কুহুরা ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু কুহুর হঠাৎ বিষন্ন টা নিয়ে রোহান কে ভাবাছে। ওর তো মনে হচ্ছে ও ছুটে যাক কুহুর পানে কিন্তু সেইটা তো আদোও সম্ভব না। সে যে তার কর্তব্য টানে ছুটে এসেছে ইন্ডিয়াতে। রোহান কোনরকম ডিনার টা করে ঘুমিয়ে পড়লো।
—
এখন আর সকালে কাজ করতে হয় না কুহুর। ঘুম থেকে উঠে পড়তে বসে। কুহু পড়ছিলো তখনও স্মৃতি কুহুর ঘরে গভীর ঘুমে আছন্ন। কুহু ঘড়িতে টাইম টা দেখে নিলো ৮ টা বাজে কুহু স্মৃতি কে ডেকে তুলে বললো ফ্রেশ হয়ে নিতে। স্মৃতি আড়মোড়া দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। কুহু পড়া টেবিল ছেড়ে উঠে ব্যাগ টা গুছিয়ে নিলো। তারপর একেবারে রেডি হয়ে নিয়ে কাঁধে ব্যাগ টা নিয়ে নিচে নামলো। শ্রাবনী তখন রওনক কে ব্রেকফার্স্ট দিচ্ছিলো। কুহুকে দেখে শ্রাবনী বললো,, কুহু তুমি এখন নাস্তা করবে তো আসো খেয়ে নেও।
কুহু চেয়ার টেনে বসতেই রোহানের চাচি বলে উঠলো আসছে আমাদের মহারানী ওকে আপায়ণ করো।
শ্রাবনী যেহেতু নতুন তাই তেমন কিছু বলেনা তবে কিছু কিছু কথার উত্তর দেয় রোহান যাওয়ার আগে কুহুর দায়িত্ব যে ওর উপর দিয়ে গিয়েছে। শ্রাবনী হেসে বললো,, অবশ্যই মহারানী ই তো দেখেন না দেখতে শুনতে মাশা-আল্লাহ। আল্লাহ্ খুব যত্ন করে ওরে বানিয়েছেন। তা চাচি আম্মা আপনি শুধু কুহুর দোষ টা ধরেন কেনো? আপনার মেয়ে টা ধরতে পারেন না। লেখা পড়া তো সব বিসর্জন দিচ্ছে সারাক্ষণ শুধু ফোন আর ফোন। কি আছে এতো ফোনে। ওর সমবয়সী তো স্মৃতিও কই স্মৃতি কে তো এইরকম কিছু দেখি না।
কুহু না খেয়ে চলে যেতে নিলো শ্রাবনী কুহু টেনে বসিয়ে দিলো রওনক তার প্লেট থেকে খাবার টা কুহুর মুখের সামনে তুলে ধরলো কুহু খাইয়ে দিচ্ছে। কুহুর চোখ থেকে টপ করে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো।
এর মাঝে স্মৃতি এসে কুহুর পাশে বসলো। কুহুর দিকে তাকিয়ে দেখলো কুহুর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। স্মৃতি কুহুর চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বললো,, খাওয়ার সময় চোখের পানি ফেলতে নেই। আর সবার কথায় ধরতে নেই। খাও। স্মৃতি তার চাচির দিকে তাকিয়ে বললো,, তা চাচি আর কত কূ”ট”না”মি করবেন বয়স হচ্ছে তো ধর্ম-কর্মে মন দিন এক ঠ্যাং তো কবরে তাও এতো কূটনামি আসে কোথা থেকে?
শ্রাবনীর হাসি পেলো। শ্রাবনী মিটমিট করে হাসছে রওনক স্মৃতির চুল টেনে দিয়ে বললো,, তুই একদম রোহানের মতো হয়েছিস।
কুহু খাওয়া শেষ করে উঠতে নিলো রওনক ওকে কিছু টাকা দিলো বললো,, সামনে তো পরীক্ষা জরুরি কিছু কিনে নিস আর সাবধানে যাস।
কুহু মাথা নাড়িয়ে সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো কলেজের জন্য।
—
পরিত্যক্ত একটা ভাঙ্গা বাড়িতে আটকে রাখা হয়েছে এক মাঝ বয়স্ক লোক কে। হাত পা বাধা অবস্থায় পরে আছে। রোহান বন্ধ দরজা টা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে। লোকটির কাছে যায় লোকটির বাঁধন খুলে দেয়, তখন লোকটির চোখে ভয় এবং দুঃখের মিশ্রণ ছিল। রোহান তাকে সাহায্য করে, কিন্তু সে মনে মনে জানে, এখানে কেবলমাত্র একজন নিরীহ ব্যক্তি আটকে নেই। এই চক্রটি আসলে নারীদের পাচারের সাথে জড়িত, আর এই জায়গাটি তাদের কুৎসিত ব্যবসার একটি অংশ। লোকটি যখন একটু সুস্থ হয়, তখন রোহান দ্রুত জানতে চায়:
“তুমি কি জানো, এখানে কিসের একটা অপরাধ চলছে?”
লোকটি কষ্টে বললো, “তারা… তারা না”রী পা”চা”র করছে। আমার ওপর চাপ দিয়ে এখানে আটকে রেখেছিল। যতক্ষণ না আমি তাদের ব্যবসার জন্য কাজ করি, তারা আমাকে ছেড়ে দেবে না। আর অনেক মেয়ে এখান থেকে চলে গেছে।”
রোহান এক পা এগিয়ে গেলো, তার মুখে কঠোরতা বেড়ে গেলো। “তোমার কাছ থেকে আর কিছু জানাতে হবে।”
লোকটি চুপ করে থাকল কিছুক্ষণ, তারপর সে এক অস্বস্তিকর গলায় বললো, “আমি জানি না। কিন্তু এক নারী এসেছে, আর সে খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তারা তাকে নিয়ে গেছে…”
রোহান বুঝতে পারলো, এই অপরাধী চক্রের কাছে অনেক কিছু লুকানো রয়েছে। এখন সে শুধু একটি নিরীহ ব্যক্তি নয়, এই চক্রের শিকারদের জীবনও রক্ষা করতে হবে। সেই মহিলার বিষয়ে তাকে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে, কিন্তু এক্ষেত্রে তার দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
রোহান দ্রুত ফোনে কল করে তার সহকর্মীকে জানালো, “এই জায়গায় নারী পা”চা”রে”র বড় চক্র কাজ করছে। আমরা যত তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা না নেব, ততই আরও জীবন বিপদে পড়বে।”
লোকটির কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, রোহান জানতো, এই অপরাধী চক্রের নেটওয়ার্ক আরও ব্যাপক। তাই সে সিদ্ধান্ত নেয়, আরো গভীরভাবে তদন্ত করে এবং এই চক্রের শিকড় বের করতে হবে। তবে এটা সহজ হবে না। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। রোহান মনে মনে ভাবলো এখন আমার সাথে লোক নেই যদি এইখানে থাকি তাহলে বিপদে পড়তে পারি তাই এখন আপাতত আমি চলে যাই তারপর লোক নিয়ে আসবো। সেই লোকটা কে নিয়ে সে চলে গেলো।
—-
কলেজ ক্যাম্পাসে বসে আছে কুহু। ক্লাস করতে মন চায়ছে না তাই সে লাইব্রেরি থেকে কিছু বই নিয়ে বাসায় দিকে রওনা দিলো। আজ কাল বাসায় ভালো লাগে না রোহান ইন্ডিয়া চলে যাওয়ার পর থেকে ওই বাসাটা তার জন্য দোযখ এর পরিণত হয়েছে বলে মনে হয়। রোহানের ফুফু আর ওনার মেয়ে মুন চলে গেলো ও রাজীব আর সজীব থেকে যায়। সুযোগ পেলেই কুহুর সাথে অ”স”ভ্য”তা”মি করে। নোংরা ভাবে হাসে এইসব দেখে কুহুর ঘা গিন গিন করে উঠে। আজ আর হেটে যেতে ভালো লাগছে না তাই সে একটা অটো নিয়ে বাড়ির দিকে গেলো। বাড়ি এসে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে বিছানার উপর বই গুলো নিয়ে বসলো।
Data Entry Specialist
কুহু একদিকে ভাবতে লাগলো, রোহান ইন্ডিয়া চলে যাওয়ার পর তার পৃথিবী যেন অন্ধকারে ঢেকে গেছে। কিছুতেই আগের মতো হাসতে পারে না। বাসায় এসে সে হালকা মেজাজে বইয়ের ভেতর চোখ রেখেছিল, কিন্তু মন অন্য কোথাও হারিয়ে গেছে। রাজীব আর সজীবের গা ঘিনঘিনে আচরণগুলো তার স্নায়ুতে চাপ তৈরি করছিল।
কুহু দাঁড়িয়ে গিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল। আকাশের গাঢ় নীল রঙ তাকে এক অদ্ভুত শান্তি দিয়েছিল, মনে হলো সেখানেই রোহান ভাইয়ের জন্য একটি জায়গা অপেক্ষা করছে, যেন সে ফিরে আসবে, আর সব কিছু আগের মতো হয়ে যাবে।
“রোহান ভাই, আপনি কবে দেশে আসবেন?” কুহু মুচকি হেসে আকাশের দিকে বলল। তার মনে ছিল শুধু একটাই প্রশ্ন—তখন কি আর কোনো কিছু বদলাবে?
কুহুর চোখে এক টুকরো আশা সঞ্চারিত হয়েছিল, কিন্তু তার হৃদয়ে তীব্র শূন্যতা। সে জানত, রোহান ভাই ফিরে এলেও সব কিছু আগের মতো হবে না। তার সব স্মৃতি এখন সেদিনগুলোর মতো মধুর নয়, বরং সেই দিনগুলোর মতো ভারী।
তার মন ভারাক্রান্ত ছিল, তবে সে জানত, রোহান ভাই যখনই ফিরবে, তাকে কিছু কথা বলার সুযোগ পাবে। সে আবার তাকালো আকাশের দিকে, ভেবে দেখলো, হয়তো কিছুটা সময় লাগে, কিন্তু সমস্ত কিছু ঠিক হয়ে যাবে, একদিন।
কুহু আবার বইয়ের পাতা উল্টাতে শুরু করলো, তবে কিছুতেই মনোযোগ দিতে পারছিল না। রাজীব আর সজীবের কথা মনে পড়তেই তার ভেতর এক ধরনের অসহ্য অনুভূতি উঠল। এই মুহূর্তে তার কাছে কোনো কিছুই ততটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না, যতটা প্রয়োজন ছিল নিজের শ্বাশত শান্তি ফিরে পাওয়া।
তার মনে হয়ে, রোহান ভাইয়ের ফিরে আসা শুধু তার একান্ত ইচ্ছাই নয়, বরং তার একমাত্র আশ্রয়, তার একমাত্র পরিত্রাণ। “আপনি ফিরলে, সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে,” কুহু নিজের মনে বললো, যেন এক অদৃশ্য শক্তি তাকে আশ্বস্ত করতে চায়।
—
এইদিকে রোহান এবং অগ্নি চৌধুরী একসাথে তদন্তে যোগ দেয়, তবে তারা জানতো যে, চক্রের শিকড় খুঁজে বের করতে গেলে আরও কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে। প্রথমে, তারা সেই পুরানো ভাঙ্গা বাড়িটি আবার পরিদর্শন করে, যেখানে আগের দিন রোহান কিছু তথ্য পেয়েছিল।
অগ্নি খুবই সজাগ ও চিন্তাশীল ছিল। সে জানতো, এক্সপোজ করার আগে যথেষ্ট প্রমাণ থাকা দরকার। বাড়ির প্রতিটি কোণ খুঁটিয়ে দেখার পর, তারা কয়েকটি গোপন কাগজপত্র খুঁজে পায়, যেগুলো চক্রের গুরুত্বপূর্ণ লেনদেনের ইঙ্গিত দেয়।
এখন, তাদের পরবর্তী লক্ষ্য ছিল সেই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে চক্রের আরো সদস্যদের খুঁজে বের করা এবং তাদের মধ্যে যে কেউ গোপনে এই কাজগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে, তাকে ধরা।
রোহান, অগ্নি এবং তাদের টিম জানতো, প্রতিটি পদক্ষেপ তাদের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। তবে, একসাথে তারা দৃঢ় মনোভাবে এগোচ্ছিল, এবং তাদের সম্পর্কেও কিছু অজানা দিক উন্মোচিত হতে লাগলো। তারা একটা হাভেলির ঠিকানা পেলো সেই মতো তারা সিদ্ধান্ত নিলো তারা সেই খানে ঘাপটি মেরে থাকবে যখন নারী পা”চা”রের জন্য গাড়ি তে উঠাবে তারা তখন তাদের হাতে নাতে ধরবে তাই তারা আপাতত এইখান থেকে চলে গেলো।
—
চারোদিকে আঁধার নেমে এসে গেছে এক ঝাঁক পাখি রা উড়ে যাচ্ছে তাদের গন্তব্যে। কুহুর দরজার নক করার শব্দে কুহুর ঘুম টা ছুটে গেলো। দুপুরে বই গুলো দেখতে দেখতে কখন যেনো ঘুমিয়ে পড়েছিলো বুঝতে পারেনি। কুহু বিছানা থেকে নেমে অগোছালো চুল গুলো সুন্দর করে আধখোঁপা করে নিয়ে দরজাটা খুললো। খুলে দেখলো শ্রাবনী দাঁড়িয়ে আছে। কুহু হেসে বললো আরে ভাবীমা তুমি এসো ভিতরে এসো।
না গো ভিতরে আসবো না তুমি রেডি হও সিনেমা হলে যাবো সিনেমা দেখবো।
ভাবীমা বিশ্বাস করো শরীর টা বলো নেই আর তিন দিন পর পরীক্ষা আমি একটু পরে পড়তে বসবো।
ওহ্ আচ্ছা তাহলে আমি স্মৃতি,, রওনক আর বাড়ির সবাই যাচ্ছি। কোন প্রয়োজন হলে ফোল করো আমরা চলে আসবো বলে চলে গেলো। কুহু দরজা টা বন্ধ করে দিলো নিস্তব্ধতা যেনো ঘিরে ধরেছে কুহু এইসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে পড়াতে মন দিলো। রাত তখন ৮ বাজে রাজীব আর সজীব তাড়াতাড়ি আসে। হঠাৎ বাড়ির কলিং বেল বাজাতে কিছুটা চমকে যায় কুহু কিন্তু পরে আবার ভাবে হয়তো বা বাড়ির লোক এসেছে। পড়াতে মন দেয় কিন্তু ওর দরজাতে আচমকা নক পড়াতে বেশ ঘাবড়ে যায় তারপর ভাবলো হয়তো বা স্মৃতি এসেছে ভেবে পড়া টা রেখে দরজাটা খুলে দিলো দরজা টা খুলে সামনে রাজীব আর সজীব কে দেখে বিচলিত হয়ে দরজা টা বন্ধ করতে নিলে কিন্তু ওরা বাঁধা দেয়। ওদের শক্তি সাথে কুহু পেরে উঠে না। রাজীব আর সজীব কুহুকে নোংরা চোখে দেখতে লাগলো। এই মুহূর্তে কুহুর পরিস্থিতি আরও সংকটজনক হয়ে ওঠে, এবং তার ভেতরে আতঙ্ক ও আত্মরক্ষার প্রবৃত্তি কাজ করতে থাকে। কুহু খুব দ্রুত চিন্তা করে এবং তার শরীরের প্রতিটি অঙ্গকে প্রস্তুত রাখে। তার মধ্যে এক ধরনের প্রতিরোধের শক্তি জেগে ওঠে, কারণ সে জানে, এই মুহূর্তে তার জীবনই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
কুহু পিছিয়ে যেতে থাকে, কিন্তু রাজীব আর সজীব তাকে এক মুহূর্তের জন্যও ছাড়ে না। তারা ক্রমাগত কাছে আসতে থাকে। একসময়, কুহু ব্যাকফুটে চলে যায় এবং রাজীব তাকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দেয়। কুহুর শ্বাস কষ্ট হয়ে আসে, কিন্তু সে আতঙ্কিত না হয়ে দ্রুত নিজের শক্তি কাজে লাগানোর চেষ্টা করে।
রাজীব যখন কুহুর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে যায়, কুহু একটুও চিন্তা না করে, শক্তির সাথে সরে গিয়ে তার পেছনে থাকা একটি স্ট্যান্ডিং ল্যাম্প বা অন্য কোনো শক্ত বস্তু দিয়ে রাজীবকে আঘাত করে দেয়।
কুহু (কাঁপা গলায়) “তুমি কিছু করতে পারবে না!”
এই মুহূর্তে কুহু যেন তার ভয় আর আতঙ্ককে পিছনে ফেলে দিয়ে নিজের নিরাপত্তার জন্য লড়াই শুরু করে। তার ভিতরের শক্তি তাকে চালিত করছে, যেন সে কোনো পরিস্থিতিতে হারবে না।
কুহুর এই সাহসিকতার পর, রাজীব এবং সজীব কিছুটা চমকে যায়। তাদের জন্য কুহুর এই প্রত্যাঘাত এক ধাক্কা হয়ে আসে।
কুহু যখন ল্যাম্পটি নিয়ে রাজীব এবং সজীবের পায়ে আঘাত করে, তাদের কিছু সময়ের জন্য শারীরিকভাবে দুর্বল করে ফেলে। রাজীব এবং সজীব ব্যথায় চিৎকার করে ওঠে, এবং কুহু সেই মুহূর্তে কিছুটা সময় পায় পালানোর জন্য। সে কোনো সময় নষ্ট না করে দ্রুত স্মৃতির ঘরের দিকে দৌড়ায়। তার হাতের জোর টেনে দরজাটা বন্ধ করে লক করে দেয়।
স্মৃতির ঘরের ভিতরে কুহু ধস্তাধস্তি করে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়, কিন্তু তার কোনো ক্ষতি না হয়ে সে একরকম প্রলম্বিত ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে। ভয়ে তার হাত-পা কাঁপতে থাকে, হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়ে যায়। কুহু জানে যে এখন পরিস্থিতি একেবারেই সংকটপূর্ণ। তার শরীরের অস্থিরতা বাড়ছে, তবে সে নিজেকে কিছুটা সান্ত্বনা দেয় যে এখন নিরাপদে রয়েছে।
এদিকে, তার হাত কেটে কিছু র”ক্ত ফ্লোরে পড়ে যায়, এবং সে শ্বাস নিতে সমস্যা অনুভব করতে থাকে। রক্তের দাগ কুহুর দুর্বলতার আরও প্রমাণ, কিন্তু সে জানে যে তার এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে এখন মনোযোগ দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।
কুহু ধীরে ধীরে রুমের এক কোণে বসে থাকে, পুরো শরীর কাঁপছে, কিন্তু তার মন ভেঙে যায় না। তার একমাত্র চিন্তা—কিভাবে এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে বের হওয়া যাবে।
—-
হঠাৎ ই রোহানের মনটা আনচান আনচান করতে থাকে কুহুকে এক নজর দেখার জন্য। কুহুকে দেখার জন্য ওর ঘরে গোপন ক্যামেরা লাগিয়েছিলো রোহান ল্যাপটপ টা অনে করেতে কুহু কি করেছে না করেছে তার একটা একটা ফুটেজ দেখতে থাকতে হঠাৎ চোখ পরে ১২ মিনিট আগের ঘন্টা যা দেখে রাগে কপালের রগ গুলো ফুলে উঠে। তারপর ফোন নিয়ে দ্রুত রওনক কে ফোন করে বলে শীঘ্রয় বাড়ি যেতে।
এইদিকে রোহানে বের হতে হবে। রোহান আর অগ্নি বের হলো সেই নারী পা”চা”র”কা”রী দের ধরতে। কিন্তু মনে জেগে উঠছে প্রতিশোধের আগুন। ড্রাইভার গাড়ি চালাছে তারা প্ল্যান করছে কিভাবে কি করবে কোথায় কোথায় লুকিয়ে থাকবে। রোহানের এইসবের মন নেই রোহানে মন টা পড়ে আছে বাংলাদেশে তার কুহুরানীর উপরে।
—
রওনকা চলে এসেছে। সবার আগে কুহুর রুমে গেলো। গিয়ে দেখলো মেঝেতে বই পত্র ছিটিয়ে আছে। রাজীব আর সজীব পা ধরে আর্তনাত করছে। ওদের দেখে শ্রাবনীর ভ্রুঁ জোড়া কুঁচকে গেলো। ওরা যখন গিয়েছিলো তখন ওরা তো ছিলো না ওদের কে জিজ্ঞেস করা হলে ওরা বলেছি আজ নাকি ওদের কাজ আসবে না। তাহলে ওরা এলো কেনো। মূহুর্তে দুই এ দুই এ চার করে ফেলো। শ্রাবনী আর স্মৃতি মাথায় হাত দিয়ে বললো,, ইয়া রব!
স্মৃতি চলো কুহু কে খুঁজে বের করতে হবে বলে ওরা রুম থেকে বের হলো কিন্তু রুম থেকে বের হতে দেখে ঘরে কোনে কোনে র”ক্তে”র কনা শেষ কনা টা স্মৃতির রুমের সামনে ওরা বুঝলো কুহু স্মৃতির রুমে। শ্রাবনী দরজা টা নক করে বললো কুহু দরজা খুলো আমি তোমার ভাবীমা।
কুহু দুর্বল শরীর টা নিয়ে দরজা খুলে আঁচড়ে পড়লো শ্রাবনীর বুকে অল্প সময় কাঁদতে কাঁদতে নিস্তেজ হয়ে গেলো রওনক ওকে কোলে নিয়ে গিয়ে বিছানায় শুয়ে দিলো। দ্রুত ফার্স্টেড বক্স টা নিয়ে এসে হাত টা ভালো করে পরিষ্কার করে ওষুধ লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিলো।
তারপর রোহান কে একটা টেক্সট করে দিলো তো। রোহান মেসেজ টা পেয়ে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।
—-
রাত তখন ১২ রোহান আর অগ্নি হাভেলির ঠিকানা অনুযায়ী এক অন্ধকার রাতে সেখানে পৌঁছায়। জায়গাটা শহর থেকে অনেকটা দূরে, চারদিকে সুনসান পরিবেশ। অগ্নি চারপাশে চোখ বুলিয়ে বলল,
“এখানে কোনো মুভমেন্ট নেই। সব ঠিকঠাক মনে হচ্ছে না। চক্রের লোকেরা এত সহজে ধরা পড়ার মতো বোকা হবে না।”
রোহান শান্ত গলায় বলল,
“তারা ঠিক কীভাবে কাজ করে সেটা বোঝার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। ছায়ার মতো চুপ করে থাকো।”
তারা দু’জন হাবেলির পিছনের একটা পরিত্যক্ত কক্ষের জানালার ফাঁক দিয়ে বাইরে নজর রাখছিল। আধঘণ্টা পর, কিছু গাড়ি এসে থামল। গাড়ি থেকে কিছু লোক নামল এবং একে একে কয়েকজন নারীকেও নামিয়ে হাবেলির ভিতরে নিয়ে গেল।
রোহান আর অগ্নি দেখল, নারীদের চোখে কালো কাপড় বাঁধা। লোকগুলো তাদের কথা বলতে দিচ্ছে না।
অগ্নি ফিসফিস করে বলল,
“এখনো সময় আসেনি। আমরা যদি এখন আক্রমণ করি, তাহলে প্রমাণ নষ্ট হয়ে যাবে। অপেক্ষা কর।”
কিছুক্ষণ পর, গাড়িগুলো আবার আসতে শুরু করল। এবার সেই লোকগুলো নারীদের গাড়িতে উঠাতে শুরু করল। রোহান ইশারায় অগ্নিকে বলল,
“এটাই সময়।”
তারা হঠাৎ পেছনের দরজা দিয়ে বের হয়ে সোজা গাড়ির দিকে এগিয়ে গেল। রোহান গর্জে উঠল,
“থামো! CID!”
চক্রের লোকেরা প্রথমে হতভম্ব হয়ে গেল, তারপর তারা পালানোর চেষ্টা করল। কিন্তু অগ্নি তাদের পথ আটকে বলল,
“একজনও পালানোর চেষ্টা করলে ভালো কিছু হবে না। আমরা সব জানি।”
এতে রোহান আর অগ্নি বুঝবে, পুরো প্ল্যান আরো বড়। তুই কি এমন কিছু মোড় চাস?গাড়ির দিকে এগিয়ে যাওয়ার পর, চক্রের লোকেরা পালানোর চেষ্টা করলে রোহান আর অগ্নি তাদের আটকাতে থাকেন। কিন্তু একটি কনভার্সেশন হতেই পারে, যেখানে চক্রের একজন মহিলা সদস্য, যারা নারীদের নিয়ে এসেছিল, হঠাৎ নিজের মুখোশ খুলে ফেলে।
মহিলা এক টুকরো কাগজ দিয়ে অগ্নির হাতে ফিসফিস করে বলল, “তোমরা জানো না, কী খেলা চলছে এখানে। এটা শুধু শহরের বাইরে একটা গোপন আস্তানা নয়… একদিন তোমরা বুঝবে।”
অগ্নি কাগজটা তুলে দেখে, তাতে একটি অজানা নাম এবং ঠিকানার তালিকা ছিল। রোহান তৎক্ষণাৎ তাকে বলল, “এটা কী দেখাচ্ছ?” তবে অগ্নি কাগজটা রোহানের হাতে দিয়ে বলল, “এই মুহূর্তে আমাদের শুধু ধরা পড়া চক্রের লোকদের নিয়ে যেতে হবে। তবে এই নামগুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ।”
তারা নারীদের উদ্ধার করে থানার দিকে ফিরতে শুরু করে। কিন্তু ঠিক তখনই হাবেলির মধ্যে থেকে হঠাৎ একটা বিকট শব্দ শুনতে পেল তারা। রোহান আর অগ্নি চোখে চোখ রেখে সিদ্ধান্ত নিল, “এটা আমাদের শুধু শিকার নয়, আরও কিছু বড় রহস্য অপেক্ষা করছে।”
তারা দ্রুত হাবেলির দিকে ফিরে গেল, সেই শব্দের উৎস খুঁজতে। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে, তারা দেখতে পেল অনেক পুরনো বই এবং কাগজ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, আর এক কোণে ধোঁয়ার মতো কিছু রঙিন চিহ্ন।
একটি পুরনো পোকা খাওয়া আলমারি খুলতেই তাদের সামনে চলে এল একটি অদ্ভুত পুঁথি। পুঁথির পাতাগুলিতে এক অবিশ্বাস্য চিত্রের বর্ণনা ছিল, যা পরবর্তী ঘটনা গুলোর দিকে আরো একধাপ নিয়ে যাবে।
এরা দুই দেশের অপরাধী চক্রের সদস্য , তখন তাদের নিয়ে গিয়ে তদন্তের পর দুই দেশের নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সাথে যোগাযোগ করে একটি বড় অপারেশন শুরু করতে হবে এইসব ভেবে দ্বীর্ঘ শ্বাঃস ফেললো রোহান।
রোহান আর অগ্নি, চক্রের সদস্যদের আটকানোর পর, দ্রুত তাদের থানায় নিয়ে যায়। সেখানে তারা প্রথমে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। চক্রের সদস্যরা শুরুতে কিছুই বলছিল না, কিন্তু পরবর্তীতে একজন, যিনি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, চুপচাপ অগ্নির দিকে তাকিয়ে বলল,
“তুমি জানো না, কী হতে চলেছে। দুই দেশের শক্তিশালী শক্তির মধ্যে আমরা কেবল পাওঁ(শিকারী বুঝায়)”
অগ্নি তাকে থামিয়ে দিয়ে প্রশ্ন করে, “কী পাওঁ? তোমরা কি মা”দ”ক পাচারের সঙ্গে যুক্ত? না কি কিছু অন্য ব্যাপার?”
তবে মহিলা সদস্যটি কিছু জানাল না, কেবল বলল, “যতই চেষ্টা করো, সময় তোমাদের হাতে থাকবে না। এখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথ… দু’টি দেশের মধ্যে রয়েছে।”
এখন অগ্নি এবং রোহান জানতে পারে, চক্রটি শুধু মাদক বা অস্ত্র পাচার নয়, বরং একটি আন্তর্জাতিক স”ন্ত্রা”সী কর্মকাণ্ডের অংশ। তাদের কাছে থাকা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মতে, তারা কিছু গুরুত্বপূর্ণ মানুষকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পাচার করছিল। আর সেই পরিকল্পনা দুই দেশের সীমান্তের মাঝে চলছে।
এরপর দুই দেশের গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে যোগাযোগ শুরু হয়। একদিকে, ভারতীয় ও বাংলাদেশী পুলিশদের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তুলতে হয়, অন্যদিকে এই আন্তর্জাতিক অপারেশনকে সফল করতে এবং চক্রটির মূল হোতাদের ধরতে একযোগে অভিযান চালানো।
অগ্নি এবং রোহান জানতে পারে, তাদের হাতে থাকা চক্রের সদস্যদের তথ্যের মাধ্যমে, দুই দেশের গোয়েন্দারা গভীরভাবে তদন্ত শুরু করে এবং পর্যায়ক্রমে বড় বড় চক্রের মূল পরিকল্পনা ধরা পড়ে।
তাদের এই অভিযান শুধু সীমান্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং আন্তর্জাতিক পর্যায়েও এক বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।
অগ্নি এবং রোহান যখন দুই দেশের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগে আসে, তারা বুঝতে পারে যে, চক্রটি অনেক বড় এবং এর মধ্যে অনেক স্তর জড়িত। তথ্য অনুসারে, চক্রের সদস্যরা শুধুমাত্র পাচারের জন্য এক দেশ থেকে আরেক দেশে মানুষই নয়, বরং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ক্ষতিগ্রস্ত করতে চায়। এই প্রক্রিয়ায় তারা অনেক উচ্চমানের ব্যক্তিত্ব এবং রাজনীতিবিদদেরও গোপনে ম্যানিপুলেট করছে।
এরপর গোয়েন্দা সংস্থা একত্রিত হয়ে, একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা তৈরি করে। চক্রটির শিকড় ধরে তাদের সন্ত্রাসী কাজগুলো রোধ করতে, সায়েন্স ফিকশনের মতো একটি মিশন তৈরী করা হয়— দুই দেশের সীমান্তে এক অভিনব অপারেশন চলবে।
অগ্নি এবং রোহান একত্রে মাঠে নামেন, যেখানে তারা চক্রের নতুন সদস্যদের নজরদারি করে, যারা এখনও শিকার করতে চায়। ধীরে ধীরে তাদের অবস্থান থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মেলে।
এদিকে, চক্রের পুরনো সদস্যরা খুবই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে, কারণ তারা জানে, এইবার তাদের পক্ষে পালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তাদের লক্ষ্য তখন হয়ে ওঠে, অপরাধী চক্রের মূল পরিকল্পনা সামনে আনা এবং তার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে নিরাপত্তা দুর্বলতার সুযোগ নেওয়া।
শেষমেশ, একটি চমকপ্রদ ফাঁদ পাতা হবে। তবে এখন এইখান কার কাজ শেষ। রোহান দেশে ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, কিন্তু তার মনে কুহুর কথা একটানা ঘুরপাক খাচ্ছিল। কুহু, যে তাকে বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছিল, “তুমি ফিরে যাও, কিন্তু তুমি জানো না, তোমার জীবনে কী অপেক্ষা করছে।” অগ্নি, যিনি এই অভিযানে পুরোপুরি মগ্ন, তখনও রোহানের মনোভাব বোঝে এবং তাকে শান্ত থাকতে বলে, “তুমি সবকিছু ঠিকঠাক করছো, রোহান। এইখান কার কাজ শেষ তুমি দেশে যাও বাকি আমি সামলে নিবো আমি সব সামলে দেশে গিয়ে তোমার সাথে দেখা করবো।
রোহান ঠিকই জানে, তার সামনে আরো অনেক কঠিন সময় আসবে। তবে, কুহুর কথা তাকে উদ্বিগ্ন করে তুলছে, কারণ কুহু তার জীবনে এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে,
তাদের তদন্ত যখন আরো গভীর হয়, তখন চক্রের সদস্যদের মধ্যে কেউ এক সময় এমন কিছু বলে যা তাদের সব কিছু উন্মোচন করে দিতে পারে। চক্রের নেতৃত্বের একটি বড় পরিকল্পনা ধরা পড়ে, যার মধ্যে তাদের মূল লক্ষ্য ছিল দুই দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং সেই নিরাপত্তা ভেদ করে, তারা নিজেদের পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে রোহান এবং অগ্নি একে একে চক্রের অনেক সদস্যকে আটক করে এবং তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা রক্ষা করতে এক গুরুত্বপূর্ণ অভিযান শুরু করে। তবে, রোহান ও অগ্নি জানেন যে, শেষ সফলতা শুধু চক্রের মূল হোতাদের ধরলে হবে না, বরং তাদের পিছনে যে অন্ধকারে রক্ষিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আছে, তা গোপন রাখা উচিত।
এই সবের মাঝে, রোহানের মধ্যে কুহুর জন্য একটা অস্থিরতা তৈরি হয়—একটা অনুভূতি, যা তাকে এগিয়ে যেতে আরও কঠিন করে তোলে।
রোহানের ভাগ্য ভালো সে একটা ইমার্জেন্সি টিকেট পায়। কোর্য়াটারে গিয়ে তার ব্যাগ টা নিয়ে বের হয়ে যায়।
রোহান জানে, কুহু অসুস্থ, আর এটাই তাকে দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য আরও বেশি অস্থির করে তুলছে। বাড়িতে একমাত্র স্মৃতি আর রওনক ছাড়া কেউ জানে না রোহান একজন CID অফিসার এবং তার জীবনের প্রতিদিনের ঝুঁকি কতটা বড়। তারও বিশেষ কারন আছে।
তবে, এই মুহূর্তে কুহুর অসুস্থতা এবং তার প্রতি রোহানের গভীর ভালোবাসা তাকে দ্রুত দেশে ফেরার জন্য বাধ্য করছে।
বিমানে বসে সে কুহুর কথা ভাবছিল। তার স্মৃতিতে ভেসে উঠল সেই সময়গুলো, যেই সময় টা রাজীব আর সজীব তার উপর আক্রমান চালায় রোহানের ভেবেই কষ্ট পাচ্ছে তার পাখি টা কত ই না জানি অসহায় মনে করেছে।
রোহান মনে মনে বলল,
“কুহু, তুমি জানো না আমি কী করি, কেন দূরে থাকি। কিন্তু আমি আজ তোমার কাছে ফিরব। তোমার পাশে থেকে সবকিছু ঠিক করব।”
রোহান জানত, রাজীব আর সজীব তাদের নোংরা উদ্দেশ্য পূরণের জন্য কতটা নিচে নামতে পারে। তারা বাড়ি ফাঁকা পেয়ে কুহুর সঙ্গে খারাপ কিছু করার চেষ্টা করেছিল। সেই ভয়ে কুহু ভীষণ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। তার শরীর এমনিতেই দুর্বল ছিল, আর এই মানসিক ধাক্কায় তার জ্বর বেড়ে যায়।
রোহান যখন বাড়ি ফিরল, সোজা কুহুর ঘরের দিকে এগিয়ে গেল। ঘরে ঢুকে দেখল, কুহু বিছানায় শুয়ে আছে। তার চোখ বন্ধ, মুখে অসুস্থতার ছাপ। পাশে বসে আছে স্মৃতি, রওনক আর ভাবীমা। সবার মুখ চিন্তায় ভরা।
রোহান দ্রুত কুহুর পাশে গিয়ে তার হাত ধরল। কুহুর হাতটা ঠাণ্ডা বরফের মতো। রোহান ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল, “কুহুর কী হয়েছে? ও এত অসুস্থ কেন?”
ভাবীমা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, “ওর শরীর এমনিতেই দুর্বল ছিল। তার ওপর রাজীব আর সজীব… ওদের নোংরা ইচ্ছা দেখে কুহু ভয় পেয়ে যায়। তখন থেকেই ওর অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে। মানসিক ধাক্কা সহ্য করতে পারেনি।”
রওনক গলা নিচু করে বলল, “ভাই, তুই জানিস না, রাজীব আর সজীব কতটা নিচে নেমে গেছে। তারা বাড়ি ফাঁকা পেয়ে কুহুর সঙ্গে খারাপ কিছু করার চেষ্টা করেছিল। কুহু তখন পালিয়ে বাঁচে, কিন্তু সেই ভয় ওকে ভেতর থেকে ভেঙে দিয়েছে।”
স্মৃতি কাঁপা গলায় বলল, “ভাইয়া, আমরা অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু ও কিছুতেই শান্ত হতে পারেনি। ভয়টা এমনভাবে ওকে গ্রাস করেছে যে জ্বর বেড়ে গেছে। তুই ফিরে এসেছিস, এখন তুই ওর পাশে থাক। ওকে সাহস দে।”
রোহানের চোখে যেন আগুন জ্বলতে লাগল। সে কঠিন গলায় বলল, “ওরা এটা করার সাহস পেল কীভাবে? কুহুর সঙ্গে এমন কিছু করার চেষ্টা… তাদের এর শাস্তি আমি দেব। ওদের ছাড়া হবে না।”
রওনক বললো,, ভাই ওদের আটকে রাখেছি কুহুর ঘরে।
এই কথা শুনে রোহান একটা ক্রুর হাসি দেয়। সে কুহুর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, “কুহু, আমি এখানে আছি। তুমি আর ভয় পেও না। ওরা তোমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। এবার আমি তাদের এমন শিক্ষা দেব, যাতে ভবিষ্যতে এমন কিছু করার সাহস আর কখনো না পায়।”
স্মৃতি আর রওনক চুপচাপ বাইরে চলে গেল। ভাবীমাও তাদের সঙ্গে গেলেন। রোহান কুহুর পাশে বসে রইল।
সেই রাতে রোহান আর ঘুমাল না। কুহুর পাশে বসে তার শ্বাস-প্রশ্বাসের ওঠা-নামা দেখছিল। তার মনে একটাই প্রতিজ্ঞা ঘুরপাক খাচ্ছিল—
“রাজীব আর সজীবের নোংরা উদ্দেশ্য আমি ধ্বংস করে দেব। তারা কুহুর সঙ্গে যা করেছে, তার পরিণাম তাদের পেতেই হবে।”
রওনক,, স্মৃতি,, শ্রাবনী,, রোহান,, রোহানের মা বসে আছে। মনে মনে আফসোস করছে কেনো যে কুহু একা ফেলে গেলো।
রোহান রওনক কে দিয়ে তার ফুফুকে কল করিয়ে এই বাড়িতে আসতে বলেছে। আর তার বাপ,,চাচার,,চাচির,,মৌ এর ফোন গুলো কেড়ে নিয়েছে। কাল সকালে আহম্মেদ বাড়িতে তান্ডব চলবে।
রোহান এক পলক তাকলো কুহুর পানে ইশ্ মেয়েটা দেখেই বুকটা কেমন করে উঠছে। রোহান দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করছে কাল সকাল হওয়ার অপেক্ষাতে। অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে রোহান তার মাকে ঘুমাতে পাঠালো,, স্মৃতিকে ও তাই করলো শুধু বাড়ির তিনটি মানুষ সজাগ আছে। ঘুমের মধ্যে ও কুহু কেমন ভয়ে কেঁপে উঠছে। রোহান কুহুকে জাপ্টে ধরে বললো,, কুহু পাখি ভয় পাস না আমি চলে এসেছি। তুই নিরাপদ আছিস। বুক দিয়ে আগলে রাখবো। আমার কলিজা টা আমার। কুহুর কপালে চুম্বন করতে গিয়ে রোহানের চোখ থেকে দুফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো কুহুর কপালে। কুহুর বন্ধ চোখেও কেমন জল গড়িয়ে পড়লো খুব যত্ন কুহুর চোখের পানি টা মুছে দিয়ে বললো,,,
❝শুধু তুই ছিলি, আর আমি ছিলাম তোর পাশে,
তোর ভয়, তোর কষ্ট—আমার বুকের মাঝে।
তুই যখন কেঁপে উঠলি, আমি ছিলাম সেখানে,
বুক দিয়ে আগলে রেখেছিলাম, তুই একা না ফিরে।
বিষাদ ছিল, রাতের অন্ধকার, পাখির মতো তোর আতঙ্ক,
তবে আমার হাত ছিল তোর পাশে, যতটুকু পথ—ততটুকু অন্ধকার।
কুহু, তুই জানিস কি, তোর চোখে যখন জল গড়ালো,
আমার বুকটা কেমন ছিঁড়ে গেলো, এ সবই তো আমার ভালোবাসা।
তুই আর আমি এক হলাম, অন্ধকারে, শান্তিতে,
যতটুকু ভয়, ততটুকু ভালোবাসা, আমি ছিলাম তোর কাছে।
তোর কপালে আমি চুম্বন দিলাম, দুঃখের স্রোতে,
কুহু, তুই জানিস—আমি আছি, তুই নিরাপদ, এই প্রতিজ্ঞায়।❞
ভোর পাঁচ টা বাজে সেই সময়ে কুহুর জ্বর টা কমে এলো। বাহিরে থেকে এসে একবারের জন্য ফ্রেশ হয়নি এখন ফ্রেশ হতে গেলো। ফ্রেশ হয়ে কুহুর পাশে শুয়ে পড়লো। ভাবীমা আর ভাইয়া কে রুমে পাঠিয়ে দিয়েছে।
সকাল ১০ রোহানের ফুফু আগমন হয় আহম্মেদ বাড়িতে। নিচের চেচামেচি শুনে রোহান আড়মোড়া দিয়ে ঘুম থেকে উঠে তারপর ফ্রেশ হয়ে এসে কুহুর কাছে গিয়ে কুহুর কপালে হাত দিয়ে দেখে জ্বর আছে কি না না জ্বর টা নেই। রোহান কুহুকে ডাকছে,, এই কুহুপাখি উঠ সকাল হয়ে গেছে। বেশ কয়েক বার এ ডাকে কুহু পিট পিট করে চোখটা খুলে দেখলো রোহান তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। রোহান দেখে কে অবাক এর চোখে তাকিয়ে আছে। রোহান কুহুর গালে হাত দিয়ে বললো,, কি হয়েছে কোন সমস্যা?
কুহু রোহান কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো। রোহানও বাচ্চাদের মতো করে কুহুকে আগলে নিলো তার বাহুডোরে। হুঁশ কুহুপাখি কাঁদে না তো। এইতো আমি।
❝ ভয় কি তোমার, বলতে পারো তুমি কী ভাবো,
আমার কাছে থাকলে, সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।
তবে বেশ তোমায় নিলাম আমার বাহুডোরে ❞ যাও ফ্রেশ হয়ে নেও নিচে আসো আমি নিচে আসছি। রোহান একটা ব্লাক কালারে লং ব্লেজার পড়ে হাতে ঘড়ি টা পড়ে শরীরে একটু পারফিউম মেখে পকেটে হাত দিয়ে শিষ বাজাতে বাজাতে নামছে। ওর নামা দেখে মনে হচ্ছে কোন দেশের নবাব নামছে। এমন পরিস্থিতে ওর চুপ থাকাটা ভয়ঙ্কর পূর্বভাস দিচ্ছে। রওনক শ্রবানী স্মৃতি বেশ মুডে আছে।
রোহানের কথা মতো ওর বাবা,, চাচা,, চাচি,, মৌ,, মুন সবাই বসলো।
রোহান বসে আছে দেখে বিরক্ত নিয়ে রোহানের বাবা বললো,,, চুপ করে আছো কেনো? কিছু বলো।
ওয়েট মিস্টার আহাম্মেদ আগে আমার কুইন আসুক তারপর তো বলবো। ওদের কথা মাঝে কুহুও চলে আসলো কাকতালীয় ভাবে কুহুর সাথে রোহানের ড্রেস টা মিলে যায়। রোহান ঠোঁট কামড়ে হাসলো কিঞ্চিৎ পরিমান।
রোহান বসা থেকে উঠে কুহুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কুহু যখন অর্ধেক সিঁড়িতে আসলো তখন রোহান পকেটে একটা হাত দিয়ে আরেকটা হাত কুহুর পানে এগিয়ে দিলো। কুহু ভীতসন্ত্রস্ত চোখে সবার দিকে তাকাচ্ছে রোহান সল্প হেসে চোখের পাতা ফেলে কুহুকে ভরসা দিলো। কুহু দ্বিধা মনে রোহানের হাতের উপর হাত রাখলো।
রোহান হাসি মুখে বলে উঠলো গুড গার্ল।
কুহুকে ধরে নিয়ে এসে ওর পাশে বসিয়ে দিয়ে নিজেও আগের স্টাইলে বসলো। তারপর সবাই কে উদ্দেশ্য করে বললো,,, তো এইবার মূল কথা আসা যাক।
মিসেস হাওলাদার আপনি কি জানেন আপনার চরিত্রহীন ল”ম্প”ট ছেলে এখন কোথায়?
মূহুর্তে তিনি গর্জে উঠে বললেন,, খবরদার রোহান আজেবাজে কথা বলবি? আমার ছেলেরা ভালো৷
ওহ্ রিয়েলি কতটা ভালো? ফাঁকা বাড়ি পেয়ে একটা মেয়ের সর্বনাশ করতে আসা টা কি ভালো?
তিনি আবার তেতে উঠে বললে,, বাড়ি ফাঁকা পেয়ে এই মেয়ে টা আমার ছেলে দুটো কে উস্কিয়েছে।
রোহানের ঠোঁটে তখন ভয়ংকর ক্রুর হাসি।
এই পরিস্থিতি টা না কুহু যতটা ভয় পাচ্ছে তার থেকে বেশি রোহানের হাসি টা কে ভয় পাচ্ছে ভয়ে একদম সিঁটিয়ে আছে।
তিনি বললেন মা যেমনে মেয়ে ওতো তেমনি হবে আজ এই মেয়েকে আমি মে”রে”ই ফেলবো ওর জন্য আমার ছেলেদের বদনাম হচ্ছে কথাটা বলেই তিনি কুহুকে মা”রা”র জন্য উদ্যোক্ত হয়ে হাত তুলতে নিলে রোহান আচমকা ওনার হাত টা মুচড়ে ধরে বললো,, সাহস হয় কি করে ওর গা এ হাত তুলার? আমি কিন্তু ছেড়ে দেই না আন্ডারস্ট্যান্ড। আমার সামনে ওর গা হাত তুলার চেষ্টা করলে হাত ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিতে একটা সেকেন্ড ও লাগবে না। চুপচাপ ওখানে গিয়ে বসুন। রোহানের হাত থেকে ছাড়া পেতেই তিনি চুপচাপ বসে পড়ে ভাইদের দিকে তাকালেন ওনারা ও চোখের ইশারায় চুপ থাকতে বলতে।
রোহান রওনক কে ইশারা করতে রওনক উপরে চলে গেলো। কুহুর রুম টা খুলে বাঁধা অবস্থায় রাজীব আর সজীব কে টানতে টানতে নিয়ে এসে কুহুর পা এর নিচে ফেলে ওদের দেখার মাত্র কুহু রোহানের বাহুটা শক্ত করে ধরে কাঁদতে নিলে রোহান বলে খবরদার চোখে যেনো এক ফোঁটাও পানি না দেখি চোখে পানি দেখলেই খবর আছে। রোহান রাজীবের হাতের উপর পা দিয়ে পিষতে পিষতে বলল,, এই হাত দিয়ে ই না ওকে ছুঁতে ছেয়েছিলি একদলা থুথু বের করে ওদের মুখের উপর ছুঁড়ে মে”রে তার ফুফুদের উপর র”ক্ত চক্ষু নিয়ে তাকিয়ে বলল,, মিসেস হাওলাদার আপনি না বলেছিলেন মা যেমন হবে তার মেয়ে ও তো তেমন হবে তাহলে আপনার ছেলে এমন কেনো আপনারও কি চরিত্রের কোন সমস্যা ছিলো।
রোহান ভুলে যেওনা আমি তোমার ফুফু হই। আমার সাথে ভদ্র ব্যবহার করো।
আপনি ভুলে যাবেন না মিসেস হাওলাদার আপনি কার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন। আপনার ছেলেদের হাত কাঁপলো না আমার কুহুর দিকে নোংরা হাত বাড়ায়। আজ ওদের শাস্তি কঠিন শাস্তি। রোহান রওনক ইশারা করতে রওনক তিন টা চাবুক একত্রিত করে ওদের মুখ টা বেঁধে তারপর দুই ভাই এর পিটের উপর আঘাত করতে নিলে রোহানের বাবা বাঁধা দিতে আসলো রোহান দাঁত কিড়মিড় করতে করতে বললো,, খবরদার মিস্টার আহাম্মেদরা আপনারা কেই আজ আমাকে বাঁধা দিবেন না। সবাই এক ঘাটের মাঝি। আপনাদের তিনি ভাই বোনের সব কু-কর্ম আমার জানা তাই চুপচাপ থাকুন সময় হলে আপনারা ও আপনাদের কর্মের ফল পাবেন। আর কথা না বলে দুই ভাইকে একসাথে আঘাত করলো মুখ বাঁধা থাকা অবস্থায় তারা চিৎকার করতে পারছেনা। রোহান আঘাত করতে করতে বললো,, “How dare you touch her?” আজ তোদের ছাল চামড়া তুলেই ফেলবে যেই হাত দিয়ে কুহুকে টর্চ করেছিস সেই হাত দুটো কে”টে টুকরো টুকুরো করে রাস্তার কু”কু”র”কে খাওয়াবো। রোহান আরো একটা ইশারা করলো রওনক কে রওনক ইশারা পেতে ই দুটো হেড ফোন নিয়ে এসে কুহুর আর স্মৃতির কানে দিয়ে দিলো যাতে ওরা কিছু শুনতে না পায়। কুহু ভয় পেয়ে আছে ওর হাত পা কাঁপছে। শ্রাবনী এসে কুহুকে জড়িয়ে ধরলো। স্মৃতি ও এসে কুহুকে জড়িয়ে ধরলো।
রোহানের থামার কোন নাম গন্ধনেই রোহান পা এ বোর্ড জুতার সাহায্য রাজীব হাত টা ইচ্ছে মতো পিষ্টছে। রওনক এসে সজীবের টা পিষ্টছে। রোহান আর রওনক যেনো আজ ধ্বংসের খেলায় মেতে উঠেছে। রোহান এক একটা আঘাত করছে আর বলছে,, খুব পি”নি”ক তোদের খুব উত্তেজনা তোদের মেয়ে দেখে জিভে পানি আসে। সালা বা”ই”ন”চো”দ তোদের ভাই বোনের চরিত্রে এতো সমস্যা। একজন তো ছেলে দেখে ঘেঁষাঘেঁষি শুরু করে দেয়। ওদের অবস্থা খারাপ দেখে রওনক ছেড়ে দেয় সজীব কে তারপর রোহান কে টেনে নিয়ে এসে বললো,, ভাই ছেড়ে দে আর না ম”রে যাবে।
ম”র”লে মরুক। ওদের এতো কুড় কুড়ানি আজ আমি শেষ করবো।
রোহান ভুলে যাস না তুই কে। তোর লেভের এইটা না। ওদের কে ছেড়ে দিয়ে হসপিটালে পাঠানোর ব্যবস্থা কর।
রোহানের পা এর কাছে এসে ওর ফুফু বললো,, আর মাড়িস না আমার ছেলে দুটো ম”রে যাবে ওরা আর কোন দিন তোর বাড়ির ত্রিসীমানায় আসবে না।
রোহান ছেড়ে দিলো তাদের কে। রোহান একনজর কুহুর দিকে তাকালো কুহু ভয়ে একদম বিড়াল ছানার মতো চুপসে গেছে।
ভাইয়া তুমি সামলাও বাকিটা আমি কুহুকে নিয়ে যাচ্ছি বলে কুহুর কাছে গিয়ে সামনে পিছে না তাকিয়ে কুহুকে কোলে তুলে নিয়ে রুমে চলে গেলো। রুমে নিয়ে এসে রোহান কুহুর কান থেকে হেডফোন টা খুলে দিলো কুহু তখন ভয়ে জুবুথুবু হয়ে আছে। রোহান বুঝলো ওর ঘুমের দরকার এতো কিছু চিন্তা না করে রোহান কুহুকে ঘুমের মেডিসিন খাইয়ে দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলো।
রোহানে কুহুর ওষ্ঠে নিজের ওষ্ঠ মিলিয়ে দিয়ে গভীর এক চুম্বন করে ছেড়ে দিয়ে ঘুমে আছন্ন কুহুর হাতে উল্টো পিটে চুম্বন এঁকে দিয়ে বললো,,,
❝ কুহু আমার প্রাণ প্রিয় অর্ধাঙ্গীনি,,
তুমি একা নও আমি আছি তো সর্বদা তোমার সাথে,,
আমার আত্মায় মিশে থাকা একটা অংশ তুমি,,
আত্মা ছাড়া যেমন মানুষ মৃ”ত তেমনই
তুমি ছাড়া আমি মৃ”ত ❞
❝ আত্মা কখনো মরে না, সে শুধু বদলায় রূপ,
শরীরের সীমানা পেরিয়ে, ছুঁয়ে যায় অদৃশ্যরূপ।
শূন্যতার মাঝে লুকায় সুখের স্মৃতি,
যেখানে দুঃখের ছায়া হয়ে যায় অমলিন জ্যোতি
আত্মার পথ চলা চিরকাল, অমৃতের সংগীত
তাই শোনো তার গান, গভীর মনের গভীরে,
আত্মা বলে দেয় গল্প, যা লিখে আছে সৃষ্টির সীমানা ❞
—
ঘুম থেকে উঠে কুহু এলোমেলো পায়ে নিচে নামতে নিলে রোহান কুহুকে ধরে বলে পরে গিয়ে হাত পা ভাঙ্গার শখ জেগেছে না কি তোর। আস্তে ধীরে আয়। ওরা নিচে নেমে দেখলো শুধু মাত্র,, রওনক,, শ্রাবনী,,স্মৃতি আর ওদের মা টেবিলে বসে ওদের জন্য অপেক্ষা করছে। বাকি কেই আসে নি। মূহুর্তে কুহু নিজেকে অপরাধী ভাবতে নিলে। রোহান তার দৃঢ় গলায় বলে,, একদম না কুহু তুই নিজেকে অপরাধী ভেবে কষ্ট অনুভব করবি না। তুই অপরাধী না ওরা অপরাধী সো কুল। আয় খেতে বস। ওরা খেতে বসলো। খাওয়া শেষ করে যে যে যার যার রুমে চলে গেলো।
কুহু বই নিয়ে আধশোয়া হয়ে বসে বই এর পৃষ্ঠা গুলো শুধু উল্টিয়ে যাচ্ছে কিন্তু তার কোন মন নেই পড়াতে।
কুহু মনে মনে ভাবছে, “রোহান না থাকলে কেন যেন কিছুটা ফাঁকা ফাঁকা লাগে। এমনটা কি শুধুমাত্র তার সাহায্য এবং সহানুভূতির কারণে, না কি এর পিছনে অন্য কোনো অনুভূতি বা কারণ রয়েছে?”
কুহু নিজে জানে না, কিন্তু তার মধ্যে এক অদ্ভুত অনুভূতি জন্ম নিয়েছে। রোহান যখন পাশে থাকে, তখন তার একধরনের শান্তি অনুভব হয়, মনে হয় যেন পৃথিবীটা স্থির হয়ে গেছে, সব কিছু ঠিক আছে। কিন্তু যখন রোহান নেই, সে কিছুটা অস্থির হয়ে পড়ে, তার দম নিতে কষ্ট হয়, যেন কিছুটা অস্বস্তি হয়ে থাকে।
সে বুঝতে পারে না, এই অনুভূতি কি আসলে তার আত্মবিশ্বাসের অভাবের কারণে, নাকি রোহানের উপস্থিতি তার জীবনে একটা বিশেষ স্থানের জন্ম দিয়েছে, যা সে আগে কখনো অনুভব করেনি। কুহু জানে না কেন, কিন্তু তার মনে একটি প্রশ্ন তৈরি হয়: “এটা কি সত্যিই শুধু সাহায্যের জন্য, নাকি কিছু গভীর সম্পর্কের জন্য?”
এই ভাবনায় কুহু একসময় নিজেকে হারিয়ে ফেলে, এবং রোহান সম্পর্কে তার অনুভূতির সত্যতা বুঝতে চেষ্টা করতে থাকে।
কুহু এইসব ভাবা বাদ দিয়ে পড়াতে মন দিলো কিন্তু কোথায় ও যেনো খচখচানিটা রয়ে গেলো।